সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা উৎসব চলে এসেছে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দেশের প্রতিমা নির্মাণ শিল্পীরা। তাদেরই একজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাতীয় একটি অনলাইন পত্রিকা’র প্রতিবেদক। প্রতিমা শিল্পীর নাম গোকুল পাল। তিনি প্রয়াত বিজয় পালের ছেলে। পুরাণ ঢাকায় যারা প্রতিমা বিক্রি করেন তাদের মধ্যে বিজয় পালকে চেনেন না এমন লোক নেই। তাদের আদি নিবাস বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। সেখানে তারা প্রতিমা বানিয়ে পুরাণ ঢাকাসহ শহরের সব জায়গায় প্রতিমা বিক্রি করেন।
যুগের পরিবর্তনে প্রতিমা শিল্পী বিজয় পালের সব ছেলে তাদের পৈত্রিক পেশা ধরে রাখেনি। ৮৪ বছর বয়সে বিজয় পাল মারা যান। তার ছেলেদের মধ্যে কেবল গোকুল পাল পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছেন। বাংলা বাজার সার্বজনীন পূজা কমিটির মন্দিরে (বোবা স্কুল) প্রাঙ্গণে সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়।
প্রতিবেদকঃ দাদা কেমন আছেন?
গোকুল পাল: ভাল।
প্রতিবেদকঃ আজ আমি আপনাদের কাজ সম্পর্কে জানতে এসেছি?
গোকুল পাল: বলুন, কি জানতে চান।
প্রতিবেদকঃ এ পেশায় কবে থেকে?
গোকুল পাল: সেই শিশুকাল থেকে। বাবা হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন।
প্রতিবেদকঃ এবার কটি দুর্গা প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছেন?
গোকুল পাল: ১০-১২টির।
প্রতিবেদকঃ সব প্রতিমা কি আপনি একাই তৈরি করেন?
গোকুল পাল: না। আমার সঙ্গে ৫ থেকে ৬ জন আছে।
প্রতিবেদকঃ দুর্গা প্রতিমা বানাতে কতদিন সময় লাগে?
গোকুল পাল: সেটা তো হিসেব করে বলতে পারবো না। তবে আমরা বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজে হাত দেই। এবার আপনি হিসাব করুন, কতদিন লাগে।
প্রতিবেদকঃ সে হিসেবে দেখা যাচ্ছে ৫ মাস।
গোকুল পাল: হ্যাঁ ঠিক তাই। একটা দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে ৫ মাসের মত সময় লাগে।
প্রতিবেদকঃ একটি প্রতিমা নির্মাণে সর্বোচ্চ কত নেন? আর সর্বনিম্ন কত নেন?
গোকুল পাল: সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ৩ লক্ষ টাকার প্রতিমা আছে। তবে এসব নির্ভর করে আপনার চাহিদার ওপর। যেমন প্রতিমাতে যদি শাড়ি ব্যবহার করেন তবে এর দাম বেড়ে যায়। বাজারে ২ হাজার টাকার শাড়ি আছে আবার ৫০ হাজার টাকা দামেরও শাড়ি আছে। আপনি মাকে কি ধরনের শাড়ি দিয়ে সাজাতে চান সেটা যিনি বা যারা প্রতিমার পূজা করবেন তাদের ওপর নির্ভর করে।
প্রতিবেদকঃ প্রতিমা নির্মাণ করে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ কত টাকার পারিশ্রমিক নিয়েছেন আপনি।
গোকুল পাল: ২ লক্ষ ৫০ হাজার।
প্রতিবেদকঃ কম পারিশ্রমিকে প্রতিমা নির্মাণ করেন কীভাবে?
গোকুল পাল: তখন প্রতিমার আকার হয় ছোট। এতে রং, কাপড় সবকিছুই কম লাগে যার ফলে নির্মাণ খরচ কমে যায়।
প্রতিবেদকঃ দুর্গা প্রতিমার নির্মাণের জন্য বড় সড় জায়গা লাগে। আপনার এত প্রতিমা বানান কীভাবে?
গোকুল পাল: আমরা বিভিন্ন মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন খোলা জায়গায় প্রতিমা নির্মাণ করি। এছাড়া আমাদের পৈত্রিক নিবাসে জায়গা আছে । সেখানে প্রতিমা নির্মাণ করি। যারা দুর্গা পূজা করেন। তাদের মন্দিরের অনেকই প্রতিমা বানিয়ে নেন। অথবা নির্মাণ শিল্পীদের জায়গা করে দেন। অনেকে আছে জায়গা ভাড়া নিয়ে প্রতিমা তৈরি করেন।
প্রতিবেদকঃ কাজ যেগুলো ধরেছেন। সেগুলো সময় মত হবে কি?
গোকুল পাল: অবশ্যই হবে। ষষ্ঠীর আগেই সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
প্রতিবেদকঃ আমাদের অনলাইনকে আপনার সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
গোকুল পাল: আপনাকেও ধন্যবাদ।