তবে সব কিছুর পরে একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ, আর তা হলে যারাই নিজের ব্যাপারে দ্বিতীয় বিয়ের প্রয়োজন মনে করছেন কোরআনে আলোচিত স্ত্রীদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে ন্যায়বিচার করার বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করে নিবেন। কারণ দুই নারী বা দুই স্ত্রী মাঝে পূর্ণাঙ্গভাবে ন্যায়বিচার করা একজন পুরুষের পক্ষে আসলেই কী সম্ভব?
অনেক বড় বড় দ্বীনদার মা-বোনদের কাছে আমার একথাগুলো মেনে নেয়া কঠিন ঠেকবে। তাদের কাছে এসব ত্যাগ করা সম্ভব হবে না। তারা বিলাসিতা ছাড়তে পারবে না। দ্বিতীয় বিয়ে শরীয়তে মুহাম্মাদী বিশেষ প্রয়োজনে শুধু বৈধ নয়, বরং বরকতময় সাব্যাস্ত করেছে। কিন্তু আমাদের মা-বোনদের কাছে দ্বিতীয় বিবাহ হারাম হয়ে আছে। মা-বোনেরা তোমরা যারা দ্বিতীয় বিবাহকে হারাম করে রেখেছো, আল্লাহর ওয়াস্তে স্বামীকে এর অনুমতি দিয়ে দাও। তোমাদের স্বামীরা গোনাহ করতেছে, তাতে তোমাদের কোন বাধা নেই, কিন্তু যদি দ্বিতীয় বিবাহ করে তবে তা তোমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারো না। মনে করো আসমান ভেঙ্গে মাথায় পড়ছে। তোমরা মাটিতে গড়া-গড়ি খাও। তোমরা আহাজারি করতে থাকো। স্বামীর যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে নিজের উদ্যোগে বিয়ে করিয়ে দাও। এতে তোমরা ছোট হবে না, বরং আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক উঁচু মর্যাদার অধিকারী হবে। ভালো হয় যদি কোন মহিলা এমন কাজে উদ্যোগী হয় আর সমাজের এই কুসংস্কারকে দূর করে।
দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে আরেক সমস্যা পাত্রী পক্ষের অসম্মতি। এ ক্ষেত্রে সন্তানের মা নিজে থেকে এমন উদ্যোগ নিতে পারেন। কেউ তো নিজে থেকে এভাবে প্রস্তাব নিয়ে আসবে না। তারা উড়না হিজাব নিয়ে এসে বলবে না যে, আপনার মেয়েটাকে দিয়ে দিন, আমি দ্বিতীয় বিবাহ করবো। তোমরা যদি এমন উদারতা দেখাতে পারো, তাহলে আমি বলছি এযুগেও আকাশ থেকে ফেরেশতা নেমে আসবে তোমাকে দেখার জন্য। এজন্য যে, তুমি রাসূলের এক বিলুপ্তপ্রায় মুর্দা সুন্নাতকে জীবিত করেছো। আল্লাহ তায়ালাও তোমাকে অনেক প্রতিদান দেবেন।
তোমরা যখন কোন যৌতূক-মালামাল ছাড়াই বিয়ে সমাধা করবে, আল্লাহ তায়ালা এতো মালামাল দেবেন যে, মানুষ অবাক বিস্ময়ে মুখে আঙ্গুল দিয়ে তোমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। সম্পদ আসতেই থাকবে, আসতেই থাকবে। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা। যখন মেয়ে পক্ষের একান্ত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ছেলে কোন মালামাল গ্রহণ করলো না। মেয়ে পক্ষ বারবার পীড়াপীড়ি করছিলো। আল্লাহ তায়ালা তাদের আজ এতো সম্পদ দিয়েছেন যে, যারা যৌতূক গ্রহন করাকে স্বাভাবিক মনে করতো, তারা চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। তোমরা যদি কোন দিন দ্বীনকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারো, যৌতূকের লোভ সামলাতে পারো, সেদিন দেখবে! আল্লাহ তায়ালার কাছে সম্পদের পাহাড় পড়ে আছে।
হুম বুঝলাম ইসলাম অনুমতি দিয়েছে- একজন স্বামী হিসেবে আপনি শুধু আপনার প্রয়োজন আর চাহিদার কথাই কি কেবল ভাববেন নাকি এতোটা সময় আপনার জীবনে সঙ্গী হয়ে যে নারীটি আপনাকে সঙ্গ দিয়েছেন তার কথা আপনার ভাবা উচিত। স্ত্রীরা সব কিছু ভাগ অন্যকে দিতে পারে কিন্তু স্বামীকে ভাগ করতে কখনো পারে না তারা। এমন মানসিকতার অধিকারী একটি স্বত্ত্বার আবেগ, ভালোবাসার প্রতি স্বামী হিসেবে আপনার অবশ্যই খেয়াল থাকা উচিত। একটি বিবাহ বা একটি দাম্পত্য জীবনের সূচনা তাহলে কী শুধুই একটি যৌন চাহিদা পূরণের সম্পর্ক? সেকরিফাইজ-ত্যাগ, ভালোবাসা-সহমর্মিতা বা সমবেদনার কোনো স্থানই কী নেই একটি পরিবারে?
স্বামী যদি দ্বিতীয় বিবাহ করতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে কি প্রথমা স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. জাকির নায়েক বলেন, এটি স্বামীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয় যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় তার প্রথমা স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে- কেননা কুরআন বলছে- ‘তুমি একাধিক বিয়ে করতে পারবে একটা মাত্র শর্তে যে, যদি তুমি তোমার স্ত্রীদের মধ্যে (পূর্ণাঙ্গভাবে) ন্যায়বিচার করতে পার’। কিন্তু এটি অবশ্যই উত্তম যে, দ্বিতীয় বিয়ের আগে স্ত্রীর অনুমতি নেয়া এবং এটি তার কর্তব্য যে, সে তার দ্বিতীয় বিয়ের আগে স্ত্রীকে জানানো- কেননা ইসলাম বলে- যদি একাধিক স্ত্রী থাকে, তাহলে তোমাকে অবশ্যই তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে হবে’। কারণ যদি প্রথম স্ত্রী অনুমতি দেয়, তবে স্বামী ও তার স্ত্রীর মধ্য অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বিরাজ করবে। কিন্তু এটি অত্যাবশ্যকীয় নয়, তবে যদি চুক্তিতে এটি উল্লেখ থাকে তবে তাকে অনুমতি নিয়েই বিয়ে করতে হবে। চুক্তিটি এরকম যে “তুমি স্ত্রী থাকাকালীন আমি কাউকে বিয়ে করব না”। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক বরং ভাল। তবে সব কিছুর পরে একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ, আর তা হলে যারাই নিজের ব্যাপারে দ্বিতীয় বিয়ের প্রয়োজন মনে করছেন কোরআনে আলোচিত স্ত্রীদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে ন্যায়বিচার করার বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করে নিবেন। কারণ দুই নারী বা দুই স্ত্রী মাঝে পূর্ণাঙ্গভাবে ন্যায়বিচার করা একজন পুরুষের পক্ষে আসলেই কী সম্ভব?