বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মানাধীন পদ্মা সেতু এলাকায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সিগঞ্জের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। দুই স্তর বিশিষ্ট ষ্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির (truss bridge) ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। সেতু নির্মাণের সব কাজ তদারকি করছে সেনাবাহিনী।
আগামী ১৩ অক্টোবর মাওয়ায় আসছেন তিনি। গণভবন সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে। এই দিন প্রধানমন্ত্রী সেতুর রেলের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
তার আগমন ঘিরে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
এদিকে একের পর এক পদ্মা সেতুর পাইল স্থাপন চলছে। শুক্রবার পর্যন্ত ১৭৯ পাইল বসেছে। আরও ১৩ পাইলের বটম সেকশন হয়েছে।
পদ্মা সেতুর স্প্যানের ওপর পরীক্ষামূলক রেল স্লাব বসানো হয়েছে। মঙ্গলবার সেতুর জাজিরা প্রান্তের স্প্যানে (সুপার স্ট্রাকচার) রেলওয়ে স্লাব বসেছে। ৭এফ স্প্যানের ওপর এরই মধ্যে প্রথম সেকশনে আটটি স্লাব বসিয়ে দেয়া হয়েছে। একেকটি স্প্যানে ৮টি সেকশনে আট করে মোট ৬৪ স্লাব বসবে। সেই সঙ্গে প্রতি জয়েন্টে বসবে আটটি করে স্লাব। প্রতিটি স্প্যানে জয়েন্টস মোট ৭২ রেলওয়ে স্লাব বসবে। ‘৭এফ’ স্প্যানে সেতুর সর্বশেষ প্রান্তের ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির স্প্যানের একটি সেকশনে ৮টি স্প্যান বসানো হয়। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ৮ টন ওজনের একেকটি স্লাবের দৈর্ঘ্য ২ মিটার এবং প্রস্থ ৫.১৫ মিটার। পরীক্ষামূলক এই স্লাব বসানো হয়েছে। পরবর্তীতে স্লাবের মধ্যবর্তী স্থানে কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ হবে। স্প্যানের ওপর রাখার আগে লোডটেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মাওয়া প্রান্তে সাত শত বেশি স্লাব প্রস্তুত রয়েছে। জাজিরা প্রান্তে এখন যে ছয়টি পিলারে পাঁচটি স্প্যান বসানো তাতে রেলওয়ে স্লাব বসানো হচ্ছে। স্ট্রিংগার বসানো হবে স্লাবের সঙ্গেই। ওপরের তলায় বসানো হবে রোডওয়ে বক্স স্লাব। মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে এই স্লাব তৈরি হচ্ছে।
সেতুর প্রকৌশলীরা জানান, রোডওয়ে বক্স স্লাব যে সেকশনের স্লাব বসেছে, তা পরীক্ষামূলক। এটি সফল হলেই বাকি সেকশনেও স্লাব বসতে থাকবে। প্রতিদিন স্লাব তৈরি হচ্ছে।
এদিকে খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। প্রকৌশলীরা জানান, সেতুর ১১ খুঁটিতে বিশেষ এই পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে। সেতুর এই ১১ খুঁটির (পিয়ার) ৭৭ টিউব এখন আবার ওয়ার্কসপে নেয়া হয়েছে। সেখানে খাঁজকাটার কাজ চলছে। ৩ মিটার ডায়ার প্রতিটি পাইল টিউবে দশটি করে খাঁজ লাগানো হচ্ছে। এই খাঁজ দিয়েই সিমেন্ট মিশ্রণ চলে যাবে নদীর তলদেশের নরম মাটিতে। বিশেষ সিমেন্ট মিশ্রণ মাটিকে শক্ত ভিতে নিয়ে আসবে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞরা এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করছেন।
ট্যামগুলোর মুখের অংশ এমন চোখা রাখা হয়েছে, যাতে মাটিতে প্রবেশ সহজ হয়। তবে খাঁজসহ এই পাইল স্থাপনে হ্যামারের শক্তি বেশি ব্যবহার করতে হবে। এই ট্যাম দিয়ে নরম মাটিতে ঢোকানো হবে বিশেষ ধরনের সিমেন্টের মিশ্রণ।