১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৪:৩১
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
প্রথমবারের মত পদ্মা সেতুর উপরে চললো গাড়ি, নিচে ট্রেন
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৫ এপ্রিল ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

সড়কপথ চালুর দশ মাসের মাথায় প্রথমবারের মত যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলেছে পদ্মা সেতুতে। মঙ্গলবার দুপুরে সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের ভাঙা রেলওয়ে স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে দুইটি ট্রেন ছেড়ে উত্তর প্রান্তের মাওয়া স্টেশনে আসে।

এসময় দুই পারের মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে হাত নেড়ে ট্রেনের যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। পরে বিকাল সাড়ে ৩টা’র দিকে মাওয়া স্টেশন প্রান্তে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এমপি।

পদ্মা সেতুর উপরতলায় চলছে যানবাহন আর নিচতলায় চলছে ট্রেন। এই দৃশ্য যেন সেতুর পূর্ণাঙ্গতার কথাই জানান দিচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।

এসময় তিনি বলেন, মঙ্গলবার প্রথম ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে রেলপথে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। সড়কসেতু প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে উদ্বোধন করেছেন। ট্রেন অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে এই সেতুটি পূর্ণাঙ্গতা পেলো। এসময় মন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ আগামী সেপ্টেম্বর মাসে চালু করা হবে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে এই অংশের কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুবিধাজনক সময়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।

ব্যায় বাড়ছে না এখনই

তিন ভাগে-ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের বাজেট ছিলো ছিলো ৩৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, দ্বিতীয় দফায় সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকায়। ডলারের রেট বাড়তি বা অন্যান্য কারনে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের ব্যায় বাড়বে কি না মঙ্গলবার পদ্মাসেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে রেলপথমন্ত্রী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রকল্প ব্যায় বাড়ানোর এখন পর্যন্ত কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী বছরের আগে সেটি বলা যাবে না। আগামী জুন মাসের মধ্যেই প্রকল্প শেষ করার আমাদের সময় নির্ধারণ করা আছে। তখন বলা যাবে ব্যায় আরও যুক্ত হবে কি না।’

পদ্মা সেতুর প্রথম ট্রেন চালক রবিউল

পদ্মাসেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ৭বগি সম্বলিত এমটি ট্রায়াল নামের যে ট্রেনটি গতকাল চালানো হয়েছে সেটির চালক রবিউল ইসলাম। মঙ্গলবার ফরিদপুরের ভাঙা রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় তার সঙ্গে। প্রথমেই নিজের অনুভূতির কথা বলেন তিনি। রবিউল বলেন, আসলে কিছু অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না। অনেকদিনের অপেক্ষা ছিলো, চাওয়া ছিলো পদ্মাসেতুতে ট্রেন চালাবো। আজকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসেছে। আমি অত্যন্ত আবেগ্লাপুত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু পেয়েছি। শেখ হাসিনার হাত ধরেই সেটি সফল হয়েছে। রবিউল জানান, তিনি লোকো মাষ্টার হিসেবে বর্তমানে ঈশ্বরদিতে কর্মরত আছেন। আগে তিনি ইন্টারসিটি ট্রেন চালাতেন। তবে বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ রুটে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের চালক তিনি।

দুপুর সোয়া একটার দিকে রেল ট্র্যাক কার (গ্যাংকার) ও সৈয়দপুর থেকে আনা ৭টি বগি সম্বলিত এমটি ট্রায়াল ট্রেন ভাঙা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ে। এসময় পথে পথে দাড়িয়ে রেলপথের দুই প্রান্ত থেকে স্কুল শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ যাত্রীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে আড়িয়াল খা রেল সেতু হয়ে ট্রেন পদ্মাসেতুতে উঠে বেলা পৌনে ৩টা’র দিকে।

পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকা অতিক্রম করতেই আতশ ফুটিয়ে রেলকে বরণ করে নেন স্থানীয়রা। পাথরবিহীন পদ্মা সেতুর রেল পথ ধরে মাওয়া স্টেশনে ট্রেন দুইটি পৌছায় বিকাল সোয়া ৩টা’র দিকে। এর আগে ভাঙা স্টেশনে দুপুর ১ টা’র দিকে ফিতা কেটে পদ্মা সেতুতে রেলের টেস্ট রান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের ভাঙা থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত ৪১ দশমিক ৫ কিলোমিটারের এই পথে রেলসেতু রয়েছে ৫ টি। অন্যদিকে, ভাঙা ও মাওয়া ছাড়াও পদ্মা স্টেশন, শিবচর স্টেশন, ভাঙা জংশন স্টেশন ও ভাঙা স্টেশনসহ সর্বমোট স্টেশন রয়েছে ৫টি। সবগুলো স্টেশনের কাজ চলমান রয়েছে। চলতি মাসেই শেষ হবে ৩টি স্টেশনের কাজ।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা’য় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্র্যাক কারে করে জুরাইন পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন রেলপথমন্ত্রী। পরে সড়কপথে বুড়িগঙ্গা রেল ব্রিজ নির্মাণ কাজ পরিদর্শন এবং ধলেশ্বরী ব্রিজ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন তিনি। এরপর সড়কপথে যান ফরিদপুরের ভাঙা পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে ফিতা কেটে পদ্মা সেতুতে রেলের টেস্ট রান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি।

এসময় তার সাথে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই আলম চৌধুরী, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক শামীম, ফরিদপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী, শরীয়তপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, মাদারীপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ, মুন্সিগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসাইন, ভাঙা-মাওয়া অংশের ব্যবস্থাপক বিগ্রেডিয়ার সাঈদ আহমেদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের জন্য চীন থেকে ১০০ টি বগি আনা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৫টি বাংলাদেশে পৌছেছে এবং ২০টি পথিমধ্যে জাহাজে রয়েছে। শনিবার পরীক্ষামূলকভাবে ৭টি বগি সম্বলিত যে ট্রেনটি চলেছে সেই বগিগুলো পরবর্তীতে এই পথে চলাচলকারী রেলে ব্যবহার হবে।

পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের ঠিকাদারী কাজ করছে চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি) এবং তত্ত্বাবধান করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ রেলব্রিজ মুভমেন্ট জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে পদ্মার রেলসেতুতে। এতে দ্রুতগতির রেল চলাচলের সময় এই জয়েন্টে রেললাইন ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত স¤প্রসারিত হতে পারবে। মূল সেতুর সঙ্গে দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের সংযোগ এবং মাঝে জয়েন্ট আছে ছয়টি। কংক্রিটের পাথরবিহীন রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত করতে এ জয়েন্টগুলো স্টিল দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি।

পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ-পণ্য পরিবহন, ঢাকা থেকে যশোর সাধারণ মানুষের যাতায়াতে দুরত্ব কমাবে। এতে মোংলা সমুদ্র বন্দরের কার্যকারিতা বাড়বে। এছাড়াও ভারত ও মায়ানমারের মধ্য দিয়ে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্প। তখন যাত্রীবাহী ট্রেনের চেয়ে পণ্যবাহী ট্রেন বেশি চলবে। ফলে এর মাধ্যমে যোগাযোগ ঘটবে এশিয়া ও ইউরোপে। এতে দেশের জিডিপি বাড়বে ১ শতাংশ।

 

error: দুঃখিত!