মুন্সিগঞ্জ, ১৪ এপ্রিল ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
লোকজ সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ প্রাচীন বিক্রমপুর অর্থাৎ বর্তমান মুন্সিগঞ্জের কুমারপাড়াগুলোতে একসময় পহেলা বৈশাখ আসলেই মৃৎশিল্পীরা মেলায় বিক্রি হওয়া মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, পুতুল ইত্যাদি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। এখন বাজারে চাহিদা কমা, করোনা পরিস্থিতিতে মেলা ও পূজা পার্বণ আয়োজন সীমিত হওয়ায় সেই ব্যস্ততা কমেছে।
জেলার টংগিবাড়ী, সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলায় এখনো দুই শতাধিক মৃৎশিল্পী পরিবার রয়েছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, পুতুল, সাপ, ইস্টিমারসহ বিভিন্ন ধরনের রঙ বেরঙের খেলনাসামগ্রী তৈরি করে মজুত করেছেন তারা।
সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন কুমারপাড়া ঘুড়ে দেখা যায়, বৈশাখ মেলার বিভিন্ন পণ্য রোদে শুকিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে শৈল্পিক ও কল্পনা শক্তির মিশেলে দক্ষতা ও মাধুর্য দিয়ে রং-তুলির আচঁড়ে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ বর্ণিল রঙে বৈশাখ পণ্যের পূর্ণরুপ দিচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।
আব্দুল্লাপুর কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পী সুজাতা পাল বলেন, পহেলা বৈশাখে অনেক জায়গায় মেলার আয়োজন কমে গেছে। প্লাষ্টিক-অ্যালুমিনিয়াম পণ্য বাজার দখল করায় মাটির পণ্যের চাহিদা একেবারেই নেই। আগে জেলায় এই পেশার সাথে জড়িতদের সংখ্যা ছিলো ৬ শতাধিক। এখন সেটি কমে নেমে এসেছে দুইশতে।
সিরাজদিখানের দক্ষিণ রায়পুরা এলাকার মৃৎশিল্পী ঠাকুর পাল বলেন, আগে বৈশাখী মেলায় মাটির খেলনা পণ্য বিক্রি করে অনেক আয় হতো। এখন মাটির দাম বেড়ে যাওয়া ও আধুনিকতার ছোয়ায় পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
মৃৎশিল্পী বাবুল পাল বলেন, আমি ৩০-৩৫ বৎসর যাবৎ এ পেশার সাথে জড়িত। একসময় গ্রামে-গঞ্জের হাটে, বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা ছিলো অত্যাধিক। তবে এখন আর নেই। বিয়ের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র দইয়ের পাতিল সরবরাহ করে আমাদের ব্যবসা টিকে আছে।
মৃৎশিল্পী উৎপল পাল বলেন, গেল কয়েক বছর করোনার প্রকোপে ব্যবসা একেবারেই হয়নি। এবছর রমজান মাস হওয়ায় মেলার আয়োজন সীমিত হয়েছে। তাই জমজমাট বিক্রির আশা নেই। তবুও সামান্য লাভের আশায় পরিশ্রম করেছেন কুমারপাড়ার নারী-পুরুষরা। তাছাড়া, বাজারে পণ্যের চাহিদা কমলেও মাটির দাম বাড়ছেই।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) মুন্সিগঞ্জের উপ-ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল্লাহ বলেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বিসিক মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। সেখানে জেলার মৃৎশিল্পীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করি, এর মাধ্যমে উৎপাদিত মাটির বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে তারা লাভবান হবে। তিনি বলেন, মৃৎশিল্পীরা যদি চায় আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। পাশাপাশি তারা যোগাযোগ করলে তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মৃৎশিল্পীরা আমাদের কাছে ঋণের আবেদন করলে আমরা যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয়ার চেষ্টা করবো।