২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | রাত ১১:০২
প্রবাসযাপনে মুন্সিগঞ্জে আশংকাজনকভাবে বেড়েছে পরকীয়া
খবরটি শেয়ার করুন:

ঘটনা ১: মুন্সিগঞ্জের মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা নিলা বেগম৷ দুই সন্তানের জননী সে ৷ স্বামী নাজিমুউদ্দিন কে নিয়ে সুখেই কাটছিল তাদের ছোট্ট সংসার৷ কিন্তু হঠাৎ তাদের ঘড়ে আঘাত হানে কলংকিত পরকীয়ার বিস্ফোরণ ৷স্বামীর অবর্তমানে নিলা বেগম জড়িয়ে পরে অবৈধ প্রনয় লীলায় ৷ অতঃপর পরকীয়া প্রেমের সর্ম্পক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে স্বামী নাজিমউদ্দিন দেওয়ানের সঙ্গে দাম্পত্য কলহ। এ নিয়ে একদিন  স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এর জের ধরে গভীর রাতে ঘুমন্ত স্বামীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে নিলা বেগম ৷ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে স্ত্রী নিলা বেগমকে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশে সোর্পদ করে।

ঘটনা ২: শ্রীনগর পোদ্দার পাড়ার তপন পোদ্দারের মেয়ে আশা পোদ্দাররের সাথে সাড়ে আট বছর পূর্বে পংকজ মন্ডলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর পংকজ মন্ডল সিংগাপুর চলে যান। মাঝে দুএকবার দেশে আসলেও বেশী দিন থাকেননি। তাদের সংসারে কোন সন্তানও নেই। স্বামীর অবর্তমানে আশা বেশীর ভাগ সময় তার বাবার বাড়ীতে অবস্থান করত। এসুবাদে তার সাথে খুলনা সদরের সুমন কুমারের মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিছুদিন পূর্বে পংকজ মন্ডল দেশে আসলেও সুমনের প্রেমে হাবু ডুবু খাওয়া আশার সাথে তার স্বামীর বনিবনা হচ্ছিলনা। ফলে সুমনের হাত ধরে আশা পালিয়ে যায়।

মুন্সিগঞ্জে এমন পরকীয়ার সত্য ঘটনার উদাহরণ দেয়া যাবে ভূড়ি ভূড়ি ৷ পরকীয়া শব্দটির মানে এখনকার সময়ে আর নতুন করে বলার প্রয়োজন রাখেনা। তবে এটুকু উল্লেখ করা প্রয়োজন যে – পরকীয়া একটি সামাজিক ব্যাধি। ঘুনপোঁকা যেমন কাঠের স্থায়ীত্ব ভংগুর করে দেয় ঠিক তেমনি পরকীয়া বিবাহিত সামাজিক সম্পর্ক  ভেঙ্গে-চুরে চুরমার করে দেয়৷ মানতে কষ্ট হলেও সত্যি বর্তমান সময়ে মুন্সিগঞ্জে পরকীয়ার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে৷ বিভিন্ন কারনে এ ঘটনা ঘটলেও মূল কারন হলো মুন্সিগঞ্জের পুরুষদের অধিক হারে প্রবাসযাপন৷

পরিবার এবং দেশের উন্নয়নের হাল ধরার জন্য রক্ত পানি করে টাকা রোজগার  করতে গিয়ে নিজের দাম্পত্য জিবনের হালই গুড়িয়ে দিচ্ছেন মুন্সিগঞ্জের প্রবাসীরা ৷ আর অনেক ক্ষেত্রে নিজেই বলি হচ্ছেন স্ত্রী অথবা তার বন্ধু- বান্ধবদের হাতে ৷ মুন্সিগঞ্জ জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পরা এই ভয়াল ব্যাধিটি ভেঙ্গে গুরো করে দিচ্ছে আমাদের  সামাজিক মূল্যবোধকে ৷ কিন্ত কেন মুন্সিগঞ্জের মেয়েরা জড়িয়ে যাচ্ছে এই অনৈতিক দহনে? যা তার দাম্পত্য জীবনকে করে দিচ্ছে হিরোসিমা- নাগাসাকির মত বিধ্বস্ত ৷ অবশ্য পুরুষরাও এক্ষেত্রে ধোয়া তুলসি পাতা নয় ৷

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, পরকীয়ার অন্যতম কারণ যৌনজীবনে অতৃপ্তি ও বিবাহিত জীবনের একঘেঁয়েমি। আবার অনেক সময় ব্যক্তির শৈশবে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা কিংবা বাবা মায়ের অসফল দাম্পত্য জীবনও প্রভাব ফেলে আচরণে। পরকীয়ার অনেকটাই নাকি মোহ, এক ধরনের অবসেশন। মোহ ভঙ্গ হতেও দেরি হয় না। তখন আবার অতৃপ্তির শুরু। যা পেয়েও হারিয়েছি তা আবার ফিরে পাওয়ার তৃষ্ণা। অনেক পরকীয়া প্রেমেরই পরিণতি তাই অনুতাপে। স্বামীর বাইরে গোত্রের অন্য  কোন পুরুষের সাথে যদি নারীর কোন ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’ গড়ে উঠে তবে সে স্বামী বাইরে থাকলে বা অন্য কোন সময়ে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।  এ ব্যাপারটা সাধারণভাবে প্রানীজগতের মধ্যে প্রচলিত আছে। যেমন, সাভানা বেবুনদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে  বারবারা স্মুটস সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে,  এই ধরনের বেবুনদের সমাজে একটি নারী বেবুনের সাথে প্রাথমিক বা মূল সঙ্গির বাইরেও একজন বা দু’জন  সঙ্গির সাথে ‘বিশেষ ধরনের’ সম্পর্ক গড়ে উঠে, এবং সেই সঙ্গি বা সঙ্গিরা অন্য বেবুনদের উত্যক্ত করার হাত থেকে নারী বেবুনটিকে রক্ষা করে।  ‘পর-পুরুষের’ সাথে যৌনতার বিনিময়ে মূলতঃ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নারী বেবুনটি।

পরকীয়া প্রেমের জন্য যে জিনগত বৈশিষ্ট্যও কিছুটা দায়ী সে কথা বলছে আধুনিক বিজ্ঞান। জিনগত বৈশিষ্ট্যের জন্যই কোনো কোনো ব্যক্তির মস্তিষ্কে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদানের ক্রিয়া বিক্রিয়া ঘটে যা তাকে বিয়ে বহির্ভূত প্রেম করতে বা অন্য সঙ্গী বেছে নিতে প্ররোচনা দেয়। আবার কিছু ব্যক্তির মস্তিষ্কে ওই বিশেষ রাসায়নিক বস্তুটি আছে কম মাত্রায়। ফলে দাম্পত্য জীবনে সে যতই অসুখী হোক পরকীয়ার ছায়াও মাড়াবে না। তবে এই রাসায়নিক উপাদানের ক্রিয়াবিক্রিয়া বাইরে থেকে নিজের সুস্থ মানসিকতা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷

তাই পরকীয়া নিয়ন্ত্রণে চাই সামাজিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা , ধর্মীয় অনুশাসন যথাযথরূপে পালন করা এবং এর কুপ্রভাব সম্পর্কে স্বীয় সচেতনতা গড়ে তোলা ৷

error: দুঃখিত!