মুন্সিগঞ্জ, ১৪ জুলাই, ২০২১, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
পদ্মা সেতুর প্রায় এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন লোহার মালামাল নিয়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলে এমভি হ্যাং গ্যাং-১ নামের একটি জাহাজ ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া জাহাজে প্রায় ১৮ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে মুন্সিগঞ্জে আসার পথে বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে আরেকটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। এ সময় জাহাজে থাকা ১৩ জন স্টাফকে উদ্ধার করেছেন স্থানীয় জেলেরা। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ‘পদ্মা সেতুর এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন লোহার সামগ্রী নিয়ে জাহাজটি ডুবে গেছে। তবে চালক জাহাজটিকে চরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পেরেছেন। এজন্য জাহাজের মালামাল উদ্ধার করা যাবে। এরই মধ্যে অন্য জাহাজ ও ক্রেন পাঠানো হয়েছে। আশা করি, শতভাগ মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘এসব মালামালের দায়িত্ব ঠিকাদারের ওপর বর্তায়। দুর্ঘটনাকবলিত হলে সেতু প্রকল্পের কাজে প্রভাব পড়তে পারে। এসব কারণে অনেক সময় প্রকল্পের কাজের সময় বেড়ে যায়। এজন্য মালামালসহ ডুবে যাওয়া জাহাজের নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘ডুবে যাওয়া মালামালের মধ্যে আছে রেলওয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া ওয়াকওয়ে তৈরির টানেল ও অ্যাঙ্গেল। এসব মালামালের ফিনিশিং কাজও হয়ে গিয়েছিল। প্রায় দেড় লাখ টাকা টন হিসাবে এক হাজার ২০০ টন সামগ্রীর দাম পড়ে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।’
কঠোর লকডাউনের মধ্যেও পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘লকডাউনের কোনও প্রভাব সেতুর কাজে পড়ে না। এই সময়ে সেতুর মালামাল আনতে সুবিধা হয়। যে গ্যাস পাইপের লাইন টানার মালামাল আনতে এক মাস লাগার কথা ছিল, লকডাউনের কারণে মাত্র ১৫ দিনেই সব মালামাল এসে গেছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক সেলিম বলেন, সকালে জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে পদ্মা সেতুর মালামাল নেওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে স্টিয়ারিং ফেল করে। এতে সাগরে ডুবে থাকা আরেকটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়।
তিনি বলেন, আগে ডুবে যাওয়া জাহাজের এলাকা চিহ্নিত করে বয়া স্থাপন করা হয়েছিল। যাতে অন্যান্য জাহাজ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। মূলত স্টিয়ারিং ফেল করায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে গত ১০ জুলাই ওই চ্যানেলে ডুবে থাকা বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এমভি ফুলতলা নামের একটি জাহাজ ডুবে যায়। এমভি হ্যাং গ্যাং-১ জাহাজটি পরিচালনা করছে এমজেড শিপিং লাইনস।
ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম এবং হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, পদ্মা সেতুর মালামাল নিয়ে জাহাজ ডুবে যাওয়ার কথা শুনেছেন তারা। তবে জাহাজ উদ্ধারে তাদের সহযোগিতা চাননি নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর অগ্রগতি ৯৪ ভাগ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৭ ভাগ। সেতুর অবশিষ্ট কাজের মধ্যে রয়েছে রোডওয়ে স্ল্যাব, প্যারাপেট ওয়াল, স্ট্রিট লাইটিং ইত্যাদি। প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।