১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | রাত ১০:৪০
পদ্মাসেতুর সুপার স্ট্রাকচারের প্রথম স্প্যান মাওয়ায়, ৩৭ শতাংশ কাজ শেষ
খবরটি শেয়ার করুন:

২০১৮ সালে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের প্রথম দিনই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেতুর ওপরের ডেকে থাকবে চারলেন বিশিষ্ট সড়ক আর নিচের ডেকে হবে ব্রডগেজ সিঙ্গেল রেললাইন।

বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মাসেতুর সুপার স্ট্রাকচারের প্রথম স্প্যান চীন থেকে মাওয়া সাইটে এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।আজ (সোমবার) ৮ আগস্ট দুপুরে চীন থেকে মংলা বন্দর হয়ে স্প্যানটি মাওয়ায় পৌঁছায়। স্টিলের তৈরি এই স্প্যানের উপর মূল সেতু দাঁড়াবে।

সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী।তিনি বলেন, ল্যাব টেস্টসহ অন্যান্য টেস্ট সম্পন্ন করার পর আগামী ডিসেম্বরে পিলারের উপর স্প্যান স্থাপনের কাজ শুরু হবে।

‘আজ পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে ৩৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত ২৬টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। রোববার থেকে জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের পাইলের কাজও শুরু হয়েছে।’

মন্ত্রী জানান, মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচারে মোট ৪১টি স্প্যান থাকবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০মিটার এবং আনুমানিক ওজন ২ হাজার ৯০০ টন।

পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত এ রেলরুটের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার। যাত্রীবাহী ট্রেন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মালবাহী ট্রেন চলবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে।

আজ (সোমবার) ৮ আগস্ট চায়না রেলওয়ে গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রকল্পের সার-সংক্ষেপ থেকে জানা গেছে, ১৬৯ কিলোমিটারের পদ্মা রেল সংযোগ রুট চারটি সেকশনে বিভক্ত থাকবে।

প্রথম সেকশন ঢাকা থেকে গেণ্ডারিয়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার। দ্বিতীয় সেকশন গেণ্ডারিয়া থেকে মাওয়া ৩৭ কিলোমিটার, তৃতীয় সেকশন মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং চুতর্থ সেকশন হবে ভাঙ্গা জংশন থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার।

এর মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যেদিন পদ্মাসেতুর উদ্বোধন করা হবে সেদিনই ডে-ওয়ান থেকে পদ্মাসেতুর ওপর ট্রেন চালুর জন্য সেকশন ৩ এর মাওয়া-ভাঙ্গা জংশন-ভাঙ্গা (৪২ কিলোমিটার) নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এতে সেতুর পুর্বদিকে মাওয়া স্টেশন থেকে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত নবনির্মিত রেললাইনটি ভাঙ্গা-ফরিদপুর-পাচুড়িয়া-রাজবাড়ী সেকশনের মাধ্যমে পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যমান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

রাজধানী শহর থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলওয়ে সংযোগ স্থাপনের বাকি তিন সেকশনের নির্মাণ কাজ একই সময়ে শুরু হবে এবং ২০২২ সালে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে।

প্রকল্পের মধ্যে ৬৬টি বড় ব্রিজ, ২৪৪টি ছোট ব্রিজ এবং মাওয়া প্রান্ত্রে অ্যাপ্রোচ রোড ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। ৩০টি লেভেল ক্রসিং হবে, এর মধ্যে ১৩টি স্পেশাল ক্লাস, ১টি এ ক্লাস, ৮টি বি ক্লাস এবং ৮টি সি ক্লাস নির্মাণ করা হবে।

নতুন এ রেলরুটে ১০০ ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সরবরাহ করা হবে। যার মধ্যে ৪টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার, ১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার, ৫২টি শোভন চেয়ার কার, ১৮টি প্যান্ট্রি ও গার্ডব্রেকসহ শোভন চেয়ার কার এবং ১০টি পাওয়ার কারসহ শোভন চেয়ার কার চলবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক আমজাদ হেসেন জানান, এ রেললাইন ঢাকা-যশোরের ১৮৪ কিলোমিটার দূরত্ব কমাবে। ঢাকা-খুলনার মধ্যে কমাবে ২১২ কিলোমিটার দূরত্ব এবং ঢাকা দর্শনার মধ্যে কমিয়ে আনবে ৪৪ কিলোমিটার দূরত্ব।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলরুটের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিশদ নকশা ও টেন্ডারিং এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে।

এখন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলায় জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।প্রকল্পের অধীনে কেরাণীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল, জামদিয়া ও পদ্মাবিয়া জংশন এলাকাগুলোতে নতুন ১৪টি স্টেশন ভবন ও ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে।

আর বিদ্যমান ৬টি স্টেশন গেণ্ডারিয়া, ভাঙ্গা, কাশিয়ানী জংশন, সিঙ্গিয়া ও রুপদিয়া স্টেশনের সংস্কার করা হবে।

error: দুঃখিত!