মুন্সিগঞ্জ, ৪ এপ্রিল ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
পদ্মাসেতুর নিচতলায় ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাথরবিহীন রেললাইনে প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলবে আজ। এ লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দুপুর ১২টা’র দিকে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের ভাঙা স্টেশন থেকে ট্রেনে করে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া স্টেশনে নামবেন রেলপথমন্ত্রী। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে মাওয়া প্রান্তে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলবেন মন্ত্রী।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. মনিরুজ্জামান এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টা’য় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্র্যাক কারে করে জুরাইন পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করবেন রেলমন্ত্রী। পরে সড়কপথে বুড়িগঙ্গা রেল ব্রিজের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন এবং ধলেশ্বরী ব্রিজ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করে সড়কপথে ভাঙা স্টেশনে যাবেন তিনি। সেখান থেকে পদ্মাসেতু রেলপথ পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে দুপুর ১২ টা’র দিকে ট্র্যাক কারে চড়বেন।
এসময় তার সাথে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরীসহ রেল প্রকল্পের পরিচালক, ঠীকাদার ও অন্যান্যরা যোগ দেবেন। রেল ট্র্যাক কারে পদ্মা সেতু হয়ে বেলা আড়াইটার দিকে মাওয়া স্টেশনে নেমে মাওয়া ক্যাম্পে প্রেস ব্রিফিং করবেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। সেখানে তিনি প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরবেন।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন গতকাল সোমবার জানান, পদ্মাসেতুতে পরীক্ষামূলক রেল চলাচলের জন্য সোমবার ভাঙা স্টেশন থেকে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪১.৫ কিলোমিটার রেলপথ আমরা ঘুরে দেখেছি। এটি রেল চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতুতে রেললাইন স্থাপন করাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের ছিলো। সেই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করতে পেরেছি। এটা একটি মাইলফলক। একইসাথে আমরা আশা করি, আগামী জুনের মধ্যে অসম্পূর্ণ কাজ সমাপ্ত হবে।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ বিগ্রেডিয়ার সাঈদ আহমেদ, সেতুতে ট্রেন চলাচলের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সোমবার আমরা পরীক্ষামূলক রেল ট্র্যাকও চালিয়েছি। সেটিও সফল হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রীর আগমণকে ঘিরে মাওয়া রেল স্টেশন প্রান্তে ব্রিফিং ভেনুসহ সকাল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ রেলব্রিজ মুভমেন্ট জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে পদ্মার রেলসেতুতে। এতে দ্রুতগতির রেল চলাচলের সময় এই জয়েন্টে রেললাইন ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারবে। মূল সেতুর সঙ্গে দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের সংযোগ এবং মাঝে জয়েন্ট আছে ছয়টি। কংক্রিটের পাথরবিহীন রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত করতে এ জয়েন্টগুলো স্টিল দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি। পুরো সেতুতে ১০ হাজার ৭৯০টি স্পিপার বসেছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে তিন ভাগে-ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ করছে চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)। কাজটি তত্ত্বাবধান করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।