মুন্সিগঞ্জ, ২১ মার্চ, ২০২২, মন্তব্য প্রতিবেদন (আমার বিক্রমপুর)
প্রতিবার লঞ্চ ডোবে, মুন্সিগঞ্জের মানুষ মরে। আমাদের নেতারা দুঃখ পান। তারা বিবৃতি দেন, গভীর শোক জানান-এরপর ভুলে যান। এর কয়েকদিন পর আবার লঞ্চ ডোবে, আবার মানুষ মরে।
বারবার দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে নেতারা যদি দুঃখ পেয়ে থাকেন তাহলে তাদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী, মরে গিয়ে তাদের ব্যাথা দেয়ার জন্য আমরা দুঃখিত।
একটি এলাকার প্রধান সমস্যা যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা সেখানে বারবার দূর্ঘটনার পরও দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা না নিতে পারা অবশ্যই জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে।
হয় তারা জনগণের ভাষা বোঝেন না, না হয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালনে তারা অপরিপক্ক।
লঞ্চ ডুবে মুন্সিগঞ্জের মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও লঞ্চ ডুবে মানুষ মারা গেছে। কিন্তু প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা নানা মুখরোচক আশ্বাস-বাণী দিলেও মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে কোন দৃশ্যত উদ্যোগ নিতে পারেনি।
বুড়িগঙ্গায় ২০২০ সালের জুনে ময়ুর-৭ এর ধাক্কায় মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চ মর্ণি বার্ড ডুবে যায়। সে ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে ৩২ জনের। এর মধ্যে ২১ জন পুরুষ, ৮ জন নারী ও বাকি ৩ জন শিশু ছিলো। এদের বেশিরভাগই মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার।
এরপর ২০২১ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ এর ধাক্কায় ১০০ যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চ এম এল সাবিত আল হাসান। এ ঘটনায় ৩৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের বেশিরভাগও মুন্সিগঞ্জের।
সর্বশেষ গতকাল রোববার (২০ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর একই অংশে একইভাবে বেপরোয়া কার্গো জাহাজ এম ভি রুপসী-৯ এর ধাক্কায় প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চ এম এল আশরাফউদ্দিন ডুবে যায়। এ ঘটনায় আজ সোমবার (২১ মার্চ) সকাল পর্যন্ত সর্বশেষ ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বন্ধ করা হয় নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ রুটে নৌ চলাচল। সকাল ১১ টা পর্যন্ত এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ২-৩ জন।
আগের ঘটনাগুলোর মতই সর্বশেষ ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘাতক কার্গো জাহাজ আটক করা হয়েছে। এরপর কার্গোর বিরুদ্ধে মামলা হবে, সেই মামলা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনি বলা মুশকিল। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় এরকম দূর্ঘটনা আবারও ঘটবে। এবং এর জন্য দায়ী যেই থাকুক না কেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস আগের জায়গায়ই থাকবে। আশ্বাসের বাস্তব রুপ চোখে দেখা যাবে না।