মুন্সিগঞ্জ, ১২ এপ্রিল, ২০২২, সাজ্জাদ হোসেন (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ শহরের রাস্তাগুলো এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার রিকশার দখলে। ঈদকে সামনে রেখে শহরে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ না থাকা ও অতিরিক্ত অটোরিকশা চলাচল করায় শহরে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরে প্রায় ৭ হাজার ৪০০ মিশুক-অটোরিকশা চলাচল করে। শহরের সুপারমার্কেট মোড় হয়ে শিল্পকলা একাডেমী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দুই সড়কের আশপাশে বিপণিবিতান, বাজার, ব্যাংক ও গুরুত্বপূর্ণ অফিস অবস্থিত। অটোরিকশার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে প্রায় প্রতিদিনই যানজটের কবলে পড়তে হয় নাগরিকদের।
গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শহর বাজার থেকে শুরু হয়ে অঙ্কুরিত-৭১ ভাস্কর্য পর্যন্ত যানজটের দীর্ঘ সাড়ি। এরপর সুপার মার্কেট সড়কেও দেখা যায় একই চিত্র। এখানে একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তিনি একাও হিমশিম খাচ্ছেন চারদিক থেকে আসা যানবাহনের চাপ সামাল দিতে।
এদিকে, পুরো সড়ক রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ঠাসা। থেমে থেমে অটোরিকশার জটলা তৈরি হচ্ছে। যাত্রী দেখলেই চার্জার রিকশাগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আবার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীর আশায় অটোরিকশাগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে মুহূর্তেই অটো ও চার্জার রিকশার দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। এই দীর্ঘ সারির কারণে পথচারীদের সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়াও বেশ কষ্টকর।
বাজার শেষ করে রাস্তার উল্টো দিকে যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন শহরের শ্রীপল্লি এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বাজার করতে যত সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় রাস্তায় চলে যায়। রাস্তা পার হতেও অনেক সময় লাগে। মুন্সিগঞ্জ শহরের রাস্তাগুলো এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার রিকশার দখলে। অটোরিকশা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ না থাকা ও অতিরিক্ত অটোরিকশা চলাচল করায় শহরে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
নাহিদ হোসেন নামে এক পথচারী জানান, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে রিকশা নিই। এরপর দেখি ২০ টি মিশুক-অটোরিকশার পিছনে। প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেও একই জায়গায় ছিলাম। এরপর বাধ্য হয়ে পায়ে হেটে যাই।
সরকারি একটি স্কুলের শিক্ষার্থী শাহাদাত রানা জানান, শহর বাজারের সামনে থেকে পৌর ভবন পর্যন্ত মিশুক-অটোরিকশা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে ছিল। ভাড়া করা রিকশা ছেড়ে দিই। তারপর চারিদিকে এতো হর্ণের শব্দে মাথাব্যথা শুরু হয়।
বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি রোগীর স্বজন বিউটি বেগম জানান, সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত যানবাহনের হর্ণের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ি। রোগীদের জন্য আরও বেশি কষ্টকর হয়ে যায়।
মুন্সিগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক বজলুর রহমান জানান, স্বল্পতার কারণে সবজায়গায় পর্যপ্ত পুলিশ সদস্য দেওয়া যাচ্ছে না। তারমধ্যেও সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবার যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। বিভিন্ন গ্রাম, দোকানের মধ্যে এসব অটোরিকশা, মিশুক গাড়ি তৈরি হচ্ছে। এদের কোন লাইসেন্স নেই। কিংবা বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। দিন দিন শহরে এসব বেড়েই চলছে।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মো. আল জুনায়েদ জানান, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। যানজট নিরসনে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশাকরি শিগগির এ সমস্যা দূর হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট ছাড়াও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মুন্সিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ জানান, এসব মিশুক-অটোরিকশা অবৈধ। যা বিআরটিএ’র মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই। সাধারণত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলাচল করছে এসব যানবাহন। সড়ক থেকে এসব বন্ধ করার জন্য প্রশাসন, পুলিশ, পৌরসভা, জনপ্রতিনিধিসহ জনগণের যৌথ উদ্যোগ লাগবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এসব যানবাহন যদি একেকটি রঙ করে দেওয়ার পর চলাচলের পথ নির্ধারণ করে দেওয়া যায় তাহলে যানজট কমে আসতে পারে।
মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র সোহেল রানা রানু জানান, শহরে প্রায় ৭ হাজার ৪০০ মিশুক-অটোরিকশা চলাচল করে থাকে। যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়কে যানজট নিরসনে পৌরসভার আওতাধীন সেচ্ছাসেবী ও আনসার সদস্য কাজ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এটি বন্ধ আছে। তবে আবার ভাবা হচ্ছে এসব নিয়োগের ব্যাপারে। জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সভায় এ সমস্যা দূর করার জন্য আলোচনা করা হয়। মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা সহযোগিতামূলক কাজে পাশে থাকবে বলে জানান তিনি।