২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | রাত ৩:১০
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
নিঃশেষের পথে সাকা পরিবারের প্রভাব,যুদ্ধাপরাধের রায় নিয়ে নির্বিকার বিএনপি
খবরটি শেয়ার করুন:

সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। যুদ্ধাপরাধ করার পরও স্বাধীন বাংলাদেশে এমপি হয়েছেন ছয়বার। তার গাড়িতে উড়েছিল মন্ত্রীর পতাকা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতিবিষয়ক উপদেষ্টাও। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মামলায় আগামীকাল বুধবার আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে প্রায় নিঃশেষ হবে রাজনীতিতে সাকা পরিবারের প্রভাব।
কিছুদিন আগে সাকার ছোট ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী মারা গেছেন। আরেক ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে দেওয়া হয়েছে ইস্তফা। আগের মতো সচল নেই তাদের বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যও। বাবা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর মতো স্পিকার হতে চেয়েছিলেন সাকা চৌধুরী। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরানোর ইচ্ছাটাও ছিল তার প্রবল। তবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ট্রইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় এলোমেলো হয়ে গেছে সাকার সব পরিকল্পনা। নিজের এমন অবস্থার কথা আগেই টের পেয়েছিলেন তিনি। তাই জেলে থাকা অবস্থায় স্ত্রী কিংবা সন্তানকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। তবে তার সেই ইচ্ছাও পূরণ করেনি বিএনপি। এমনকি ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পর চট্টগ্রামে বড় কোনো কর্মসূচিও দেয়নি স্থানীয় বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে হরতালের পর চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হলেও সেখানে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে তেমন কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। বন্ধ পাওয়া যায় সাকার ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মোবাইল ফোনও। সাকার সঙ্গে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়া সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারতে হয়েছে সাকাকে। আপিল বিভাগের রায় বহাল থাকলে ইতিহাসের কাছেও হারতে হবে তাকে। সাকাসহ প্রভাবশালী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই নিশ্চিত করছেন ন্যায়বিচার।’ বাবার ‘যোগ্য’ উত্তরসূরি ছিলেন সাকা : মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন সাকার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনেরও বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। তিনি হয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। ১৯৫৪ সালে সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার হন ফকা চৌধুরী। বাবার মতোই স্পিকার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সাকা চেীধুরী। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর স্পিকার হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তিনি। তার সেই ইচ্ছা পূরণ করেনি চারদলীয় জোট সরকার। তবে ক্ষমতাশালী সাকাকে খুশি করতে তাকে রাজনৈতিক উপদেষ্টা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরে বিএনপির সর্বোচ্চ পর্ষদ স্থায়ী কমিটিরও সদস্য হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। বিষয়টিকে বাংলাদেশের রাজনীতির কলঙ্ক বলে মন্তব্য করে চট্টগ্রামের জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির এমন উত্থান আমাদের রাজনৈতিক দীনতাই প্রমাণ করে। আশা করি আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে আগের সব ভুল শুধরে একজন কলঙ্কিত ব্যক্তিকে সমুচিত শাস্তি দিতে পারবে জাতি।’ সাকার উত্থান যেভাবে : জানা গেছে, ১৯৭৫-এর শেষদিকে বাংলাদেশে ফিরে তেজগাঁও বিমানবন্দরে ব্রোকারি শুরু করেন সাকা চৌধুরী। বিদেশ ফেরত বাংলাদেশিদের কাছ থেকে মালপত্র কিনে ঢাকার ইসলামপুর এলাকার দোকানদারদের সরবরাহ করতে থাকেন তিনি। অভিযোগ আছে, এ ব্যবসার মাধ্যমে চোরাকারবারিদের সংস্পর্শে এসে স্বর্ণ ও মাদকদ্রব্যের চোরাকারবারেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭৮ সালের সামরিক সরকার প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমতি দিলে তিনি পুনরুজ্জীবিত বাংলাদেশ মুসলিম লীগে যোগদান করে রাজনীতি শুরু করেন। জিয়াউর রহমানের সহায়তায় তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। তবে অচিরেই এ সম্পর্কে ফাটল ধরে। ‘৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভারও সদস্য হন তিনি। তখন যুদ্ধাপরাধী সাকার গাড়িতে ওড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এরশাদ সরকারের পতন হওয়ার পর বিএনপিতে যোগ দেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। বিএনপির টিকিটে বারবার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটিরও সদস্য হন। রাজনীতিতে এভাবে শক্ত আসন গড়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে থাকে সাকা পরিবার। চট্টগ্রাম বন্দরে কিউসি শিপিংয়ের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ শুরু করে তারা। তবে ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধাপরাধে বিচারের মুখোমুখি হওয়ায় তাদের বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসাও বন্ধের পথে.

error: দুঃখিত!