১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৮:৩৭
নাব্যতার ফাঁদে ফেরি ভাসে
খবরটি শেয়ার করুন:

নাব্যতা সংকটে শিমুলিয়া (মাওয়া)-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় দুই পারে সাত শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। শুক্রবার বিকেলে ফেরি সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পর গতকাল শনিবার সারা দিনে শিমুলিয়া থেকে ফেরি ছেড়ে গেছে মাত্র সাতটি।

এর মধ্যে দুটি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও বাকি চারটি ফেরি ঘাটে ফিরে এসেছে। অন্য একটি ফেরি স্রোতের তোড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পদ্মার পালের চর নামক স্থানে চলে গেছে। এটি উদ্ধারে তিনটি জাহাজ ও একটি ফেরি কাজ করছে। এদিকে ফিরে আসা ফেরিগুলো লোড অবস্থায় নদীতেই ভাসছে। তাতে দুর্ভোগে পড়েছে অসংখ্য যাত্রী। বিআইডাব্লিউটিএর মাওয়ার সহকারী মহাব্যবস্থাপক এস এম আশিকুজ্জামান জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। শনিবার সকাল ৯টায় রওনা হলেও লৌহজং টার্নিং পার হতে না পেরে দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করে ফেরিটি ফরিদপুরে ফিরে আসে।

পরে জোয়ারে টানা ফেরি টাপলু, লেন্টিং, যমুনা, রানীক্ষেত ও রামশ্রী সকাল ১০টার পর শিমুলিয়া ঘাট ছেড়ে গেলেও লৌহজং টার্নিং পার হতে পারেনি। পরে চারটি ফেরি শিমুলিয়া ঘাটে ফিরে আসে। একটি ফেরি স্রোতে ভেসে যায়। বিআইডাব্লিউটিএর মাওয়ার সহকারী মহাব্যবস্থাপক এস এম আশিকুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ফেরিটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ফিরে আসা ফেরিগুলো ঘাটের কাছেই নদীতে যানবাহনসহ ভাসতে থাকে। ফলে ঘাট এলাকায় ফেরিজট দেখা দেয়।

গতকাল শনিবার কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে কোনো ফেরি ছাড়েনি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ ফেরি সার্ভিসে বিপর্যয় চলছে দুই সপ্তাহ ধরে। বৃহস্পতিবার থেকে তা চরম আকার ধারণ করে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দুর্গতি বেড়ে যায়। শুক্রবার নৌমন্ত্রী পরিদর্শন করে নাব্যতা সংকট রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।

নাব্যতা সংকট রোধে ড্রেজিং করা হলেও এ ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তীব্র স্রোতে ভরা বর্ষায় পলি পড়ে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের মুখ আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক ফেরি চলার জন্য চ্যানেলে পানির গভীরতা প্রয়োজন সাড়ে সাত ফুট। কিন্তু বর্তমানে পানির গভীরতা ছয় ফুটে নেমে এসেছে। এ কারণে এ রুটে চারটি রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে দুই সপ্তাহ ধরে। চলাচল করছিল মাঝারি ও ছোট আকারের বাকি ১৪টি ফেরি। এখন সেগুলোও বন্ধ। এ অবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বিআইডাব্লিউটিসির মেরিন অফিসার মো. শাহজাহান জানান, শনিবার সকালে জোয়ারের সময় পদ্মার লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের ওই এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট এলাকাজুড়ে পানি ছিল ছয় ফুট। দুটি কে টাইপ ফেরি জোয়ারের সময় পদ্মার ডুবোচরে ঠেকে ঠেকে কোনোমতে পার হতে পেরেছে। ফেরির প্রপেলারসহ ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তবে একটি সূত্র বলছে, নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হলেও নদীতে যে পরিমাণ পানি রয়েছে, তা দিয়ে ছোট ও ডাম্প ফেরিগুলো চলাচলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মান্ধাতা আমলের এ ফেরিগুলোর ইঞ্জিনের শক্তি এতই কম যে, পদ্মায় প্রচন্ড স্রোতের বিপরীতে এগুলো চলতে পারে না।

বিআইডাব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মো. সুলতান উদ্দিন খান জানিয়েছেন, নাব্যতা সংকট দূর করতে গত ঈদের দুই দিন পর থেকে পদ্মা নদীর লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে বিআইডাব্লিউটিএর তিনটি ড্রেজার কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৩৬০ ফুট প্রশস্ত আপ সাইটে ড্রেজিং করা হয়েছে। যা দিয়ে ফেরিগুলো চলাচল করছে। এখন আরো ৩৬০ ফুট ডাউন সাইটে মাটি খননের কাজ চলছে। কিন্তু পদ্মায় প্রচন্ড স্রোত আর বন্যার কারণে উজান থেকে নেমে আসা পালি মাটি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে চ্যানেলের মুখে। মাটি খননের গতি বাড়াতে আরেকটি প্রাইভেট ড্রেজার ভাড়ায় আনলেও স্রোতের কারণে সেটি যথাযথ স্থানে স্থাপন করা যাচ্ছে না। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে খননকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে শুক্রবার নৌমন্ত্রী বলেছেন, আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে পদ্মা সেতুর কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ড্রেজারগুলো দিয়ে মাটি খননের উদ্যোগ নেবেন তিনি।

মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইউনুছ আলী জানিয়েছেন, ফেরি বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া ঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু প্রাইভেট কার ফিরে গেলেও অন্যরা ফেরি পার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এ অবস্থা কখন দূর হবে বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

error: দুঃখিত!