২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | সকাল ৮:৪৮
দেশে আলু উৎপাদনে রেকর্ড
খবরটি শেয়ার করুন:

দেশে আলু উৎপাদন কয়েক বছর ধরে ৮২-৮৯ লাখ টনের ঘরে ওঠানামা করছিল। প্রথমবারের মতো তা ৯০ লাখ টন ছাড়াল। প্রাথমিক হিসাবে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ৯২ লাখ ৫৪ হাজার টন, যা এ যাবত্কালের সর্বোচ্চ। প্রতি কেজি গড়ে ১২ টাকা হিসাবে উৎপাদিত এ আলুর মূল্য ছাড়িয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

উৎপাদনের এ সাফল্য বাংলাদেশকে তুলে এনেছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০ দেশের কাতারে। আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান বর্তমানে সপ্তম।

গত বছর আলু উৎপাদনকারী দেশগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে এফএও জানিয়েছে, বাংলাদেশের গত বছর আলু উৎপাদন ছিল ৮৫ লাখ টন, বিশ্বের মধ্যে যা সপ্তম সর্বোচ্চ। ৮ কোটি ৫৯ লাখ টন উৎপাদন নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন। শীর্ষ পাঁচের বাকি দেশগুলো হলো— ভারত, রাশিয়া, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের আগে থাকা জার্মানির উৎপাদন ১ কোটি ৭ লাখ টন। বাংলাদেশের পরই রয়েছে পোল্যান্ড, বেলারুশ ও নেদারল্যান্ডস। উৎপাদনের পাশাপাশি রফতানিতেও সফলতা আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ২৬টির বেশি দেশে আলু রফতানি হচ্ছে। গত বছর রাশিয়ায় আলু রফতানি শুরু হয়েছে। পাশের দেশ ভারতও সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলু উৎপাদনের এ সাফল্যের মূল কারিগর কৃষকই। কয়েক বছরের ধারাবাহিক উৎপাদনের সুবাদে দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে আলু। সরকারও আলুর উৎপাদন বাড়াতে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে কৃষককে। দেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা, যা আলু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

যদিও উৎপাদন বাড়ানোর দিকে যতটা নজর দেয়া হয়েছে, বিপণনে সেভাবে নজর দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। আলুতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প ব্যবহারে প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিকাশও হচ্ছে ধীরে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে নতুন জাত আসছে কম। বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে মৌসুমের শুরুতে কম দামেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আলু কেন্দ্রের (সিআইপি) চিফ অব পার্টি শওকত আরা বেগম বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে হিমাগারের ধারণক্ষমতাও বাড়াতে হবে। প্রক্রিয়াজাত শিল্পে এর বিকল্প ব্যবহার ও রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগগুলো এখনো সীমিত। কয়েক বছরে দেশে আলু প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠলেও তা সঠিকভাবে বিকশিত হয়নি। কোন ফসল কোন সময়ে কী হারে আবাদ করতে হবে, সে প্রশিক্ষণেরও ঘাটতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সরকারের একটি সমন্বিত পরিকল্পনা ও নীতিসহায়তা থাকতে হবে। তা না হলে আলু চাষে বিমুখ হতে পারেন কৃষক।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন ৮৩ লাখ টন ছাড়িয়ে যায়। যদিও পরের অর্থবছর তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮২ লাখ ৫ হাজার টনে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা আবার বেড়ে যায়। ওই অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদন হয় ৮৬ লাখ ৩ হাজার টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উৎপাদন আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টনে। গত অর্থবছরে (প্রাথমিক হিসাব) দেশে আলু উৎপাদনের পরিমাণ ৯২ লাখ ৫৪ হাজার টন।

দেশে আলুর উৎপাদন বাড়লেও ভারসাম্যহীনতা রয়েছে চাহিদার সঙ্গে। এফএও এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, ১৯৯৫-৯৯ সাল পর্যন্ত দেশে জনপ্রতি আলুর চাহিদা ছিল দৈনিক গড়ে প্রায় ২৯ গ্রাম। ২০০০-০৪ সাল পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৮২ গ্রামে। আর ২০০৫-০৯ সাল পর্যন্ত এ চাহিদা পৌঁছে ৭৬ দশমিক ১৭ গ্রামে। গত অর্থবছরে তা ১০০ গ্রাম ছাড়িয়েছে। ভোক্তাদের চাহিদার পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ব্যবহার ও রফতানি মিলে মোট আলুর চাহিদা ৭২-৭৭ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার অতিরিক্ত প্রায় ১৫ লাখ টন বাড়তি আলু উৎপাদন হচ্ছে। অথচ বাড়ছে না হিমাগারের ধারণক্ষমতা। কয়েক বছর ধরেই হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ লাখ টনেই সীমাবদ্ধ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, দেশে যে কয়টি ফসলে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পাশাপাশি বাড়তি উৎপাদন হচ্ছে, আলু এর অন্যতম। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কৃষকের পরিশ্রমেই এ সফলতা এসেছে।

কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রফতানি বাজার বহুমুখী করতে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনে জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আলুর নতুন জাত ছাড় করা হয়েছে। এগুলোর জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম হওয়ায় তা প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ব্যবহার ও রফতানি উপযোগী হবে। এছাড়া সরকারিভাবে কয়েকটি হিমাগার নির্মাণ করা হয়েছে এবং বেসরকারি হিমাগার শিল্পে বিদ্যুৎ বিলে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

error: দুঃখিত!