১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | দুপুর ১:০৬
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জে পুলিশের সামনে কুপিয়ে খু.ন, দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলায় পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ৮ এপ্রিল খুন হন যুবলীগের নেতা মো. সোহরাব খান। এ ঘটনার পর থানায় ঘুরেও মামলা করতে পারেননি বলে অভিযোগ স্বজনদের।

শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) নিহত ব্যক্তির বড় ভাই মান্নান খান বাদী হয়ে স্থানীয় দুই সহোদর ইউপি চেয়ারম্যানসহ তাদের চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ ১৩ জনকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জ আদালতে মামলা করেছেন।

নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, আট দিন ধরে মামলা করতে থানায় একাধিকবার গিয়েছেন তাঁরা। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে থানা থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। এতে বাধ্য হয়ে তাঁরা আদালতের মাধ্যমে মামলা করেন। তবে পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তির স্বজনদের মামলা দিতে অনুরোধ করা হলেও তাঁরা কেউ আসেননি। এ জন্য থানায় মামলা হয়নি।

নিহত সোহরাব খান দিঘিরপাড় ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য। তাঁর বাড়ি উপজেলার মূলচর এলাকায়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোক্তার হোসেন গতকাল রাতে বলেন, সোমবার নিহত ব্যক্তির বড় ভাই আবদুল মান্নান খান বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০- ১২ জনকে আসামি করে টঙ্গিবাড়ী আমলি আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। গতকাল আদালতের বিচার মানিক দাস অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে থানাকে নির্দেশ দেন।

মামলায় টংগিবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জগলুল হালদার ভুুতুর দুই ছেলে দিঘিরপাড় ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হালদারকে ১ নং আসামি ও তার ভাই কামারখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর হালদার খুকুকে ২ নং আসামি ও তাদের চাচা টংগিবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হালদারকে ৩ নং আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, আসলাম হালদার ওরফে ভোলা ও তার দুই ছেলে রিজভী হালদার, রিহান হালদার। রাসেল হালদার ও তার ভাই যুবরাজ হালদার ফয়সাল, এইচ এম বাবর সবুজ হালদার, আবু কাউসার সোহেল, আনিছ হালদার ও দিদার হোসেন।

সোহরাব খানের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘আমার ভাই হত্যায় অন্য আসামিদের সঙ্গে দিঘিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হালদার, তাঁর ভাই খুকু হালদার এবং তাঁদের চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হালদাররাও জড়িত। ভাইয়ের লাশ দাফনের পর থেকে গত রোববার পর্যন্ত প্রতিদিন আমরা মামলা করার জন্য থানায় গিয়েছি। লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নিতে অনুরোধ করেছি। অভিযোগে আরিফ হালদারদের নাম থাকায় থানা-পুলিশ মামলা না নিয়ে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই নিরুপায় হয়ে সোমবার আদালতে অভিযোগ দাখিল করি। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’

মান্নান খানের দাবি, দিঘিরপাড় তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহ আলমের সামনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ন্যায়বিচারের আশায় মামলায় পুলিশের নাম দিতে চাননি। তারপরও পুলিশ অজানা কারণে তাঁদের মামলাটি নেয়নি।

এ বিষয়ে টংগিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা মো. সোয়েব আলীর মুঠোফোনে গতকাল রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তবে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে ওসি সোমবার বলেছিলেন, স্বজনদের কেউ থানায় সেভাবে কোনো লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেননি। তাই কোনো মামলা হয়নি।

পরিদর্শক শাহ আলমের সামনে হত্যার ঘটনার বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, তাঁর বিষয়ে তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা সোহরাব খানের ছেলে জনি খান দিঘিরপাড় ইউপির সাবেক সদস্য আসলাম হালদার ওরফে ভোলার ছেলে রিজভীর কাছে এক লাখ টাকা পেতেন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এছাড়া দিঘীরপাড় বাজার -সংলগ্ন গরুর হাটের ইজারা নিয়ে খান বংশ ও হাওলাদার বংশের পূর্ব বিরোধ রয়েছে।

টাকা লেনদেনের বিষয়ে ৮ এপ্রিল উভয় পক্ষের সালিসে বসার কথা ছিল। সেদিন সকালে আসলাম হালদারের দুই ছেলে রিয়াম হালদার, রিজভী হালদার ও তাঁদের সহযোগীরা দিঘিরপাড় তদন্তকেন্দ্রে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে সোহরাব খান ও তাঁর ছেলে জনিকে ডেকে আনেন পুলিশের পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

সেখানে সোহরাব খান ও জনিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে টংগিবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সোহরাব খানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

error: দুঃখিত!