১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বুধবার | রাত ১০:৩৯
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
ঢাকা-পঞ্চবটি-মুন্সিগঞ্জ সড়ক: স্বস্তির অপেক্ষা আরও ৪ বছর
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১ জুন, ২০২১, রিয়াদ হোসাইন (আমার বিক্রমপুর)

সড়কের দুই পাশ থেকে চার চাকার দুইটি গাড়ি ব্রেকে চাপ না দিয়ে পাশ কাটানো অনেকটাই অসম্ভব ঢাকা-ফতুল্লা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে। এতে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে সময় প্রয়োজন হয় তিন থেকে চার ঘণ্টা। কোন কোন দিন এই সময়সীমাও ছাড়িয়ে যায়।

অথচ ঢাকার গুলিস্তান থেকে মুন্সিগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। স্বাভাবিক নিয়মে বড়জোর ৫০ মিনিটের এদিক-সেদিক হবার কথা ছিল। কিন্তু মুক্তারপুর থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক যেতে দুর্ভোগ চরমে উঠে চালক ও যাত্রীদের।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটি সংস্কার করার ফলে আগের থেকে অনেকটাই মসৃণ। বিধিনিষেধের কারণে যানবাহনের সংখ্যাও তুলনামূলক কম। সড়কের দু’পাশে অসংখ্য দোকানপাট ও বিভিন্ন ধরনের শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়া সড়কটি দিয়ে নিয়মিত সিমেন্ট কোম্পানির ভারী যানবাহন চলাচল করছে। গড়ে উঠা এসব শিল্প-প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ট্রাক অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়েছে সড়কের পাশেই। কাঠপট্টি এলাকায় মালামাল লোড-আনলোড করার জন্য ভারী ট্রাকের জটলা বেঁধে থাকে। এতে আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে এ সড়কটি।

ফলে ২০ ফুটের কম সরু এ সড়কের ভোগান্তি শুরু হয় চর সৈয়দপুর মোড় থেকে। এরপর সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে গোগনগর,  কাশিপুর, মধ্যপাড়া, উত্তর কাশিপুর, দেওয়ানবাড়ি, ভোলাইল, এনায়েতনগর ও পঞ্চবটি বিসিক এলাকায়। ভোগান্তির যাত্রা শেষ হয় পঞ্চবটি চৌরাস্তায়।

কথা হয়ে এ পথের যাত্রী মো. জায়েদ এর সঙ্গে। তিনি জানান, তিনি প্রতি সপ্তাহে একদিন ঢাকার পোস্তগোলা যান রেস্টুরেন্টের কাঁচামাল আনতে। বুধবার দুপুরে ভোলাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মোড়ে যানজটে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় সিএনজি দিয়ে এ পথে এসেছি। ভেবে ছিলাম বিধিনিষেধের কারণে রাস্তা ক্লিয়ার থাকবে। কিন্তু এসে দেখি ট্রাকের জটলা লেগে আছে। একবার ট্রাকের পিছনে পড়লে শেষ রক্ষা নেই। সম্পূর্ণ রাস্তা তার পিছনে পিছনে যেতে হবে। সরু সড়কের কারণে ওভারটেক করতেও কষ্ট হয়।

ইজিবাইকে চড়ে শিশু সন্তান নিয়ে মুন্সিগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন শাহানাজ পারভীন। তিনি বলেন, জুরাইন শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি ফিরছি। ঈদে এ সড়কে দীর্ঘ যানজট হয়। তার তিক্ত অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বলেন, বছর দুয়েক আগে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ ছিলো। তখন দুপুর তিনটার দিকে জুরাইন বাসার থেকে রওনা হয়ে মুন্সিগঞ্জে রাত নয়টার পর পৌঁছেছি।

এদিকে ভাঙাচুরা ও সরু সড়কে যানজটের কারণে বন্ধ হয়ে যায় এ পথের বিআরটিসি, মুন্সিগঞ্জ এক্সপ্রেস, ঢাকা ট্রান্সপোর্টসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন। বর্তমানে যে ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি সার্ভিস দিচ্ছে সেই দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের বাসের সংখ্যাও কমেছে ।

বাস কমার কারণ হিসেবে দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক শামসুদ্দীন হালদার বলেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণের পর থেকে এ পথের যাত্রীরা ভোগান্তি এড়াতে সিএনজি, ইজিবাইকের মতো ছোট যান দিয়ে নারায়ণগঞ্জের তামাকপট্টি, দুই নম্বর গেইট, চাষাড়া, সাইনবোর্ড সড়ক হয়ে ঢাকা যাতায়াত করেন। এছাড়া লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জ-ঢাকা নৌপথ ব্যবহার করেন অনেকে। এতে যাত্রী সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে একের পর এক বাস সার্ভিস। আমাদেরও বাস কমেছে।

তিনি বলেন, শুনেছি এ সড়কটি প্রশস্তকরণসহ উড়ালসেতু নির্মাণ করা হবে। সে আশায় রয়েছি। সড়কটি নির্মাণ হলে পুনরায় এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস চালু করা হবে।

মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা বলেন, জেলা সদর ও টংগিবাড়ী উপজেলার বাসিন্দাদের সড়ক পথে যাতায়াতের অন্যতম পথ এটি। এছাড়া পদ্মা সেতু চালুর পর এই সড়কটি বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু মুক্তারপুর সেতুর উত্তর পাশ থেকে সড়কটির দেখভালের দায়িত্বে আছে সেতু বিভাগ। তবে মুক্তারপুর সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে শ্রীনগর ছনবাড়ি পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দিয়েছে মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ।

গত বছর ৮ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির ব্যয় হবে দুই হাজার ২২৭ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ২ হাজার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে ২২২ কোটি ৫৭ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। গেল জানুয়ারি মাসে শুরু করে ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়।

সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, সাত কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক দুই লেনে এবং ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। প্রশস্ত চার লেন সড়কের দুই লেনের ওপর ৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটারসহ মোট ৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (র‌্যাম্পসহ) নির্মাণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রকল্পের কনসালট্যান্ট (পরামর্শক) নিয়োগ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি। তবে প্রকল্পের মূল চ্যালেঞ্জ জমি অধিগ্রহণ ও ভূগর্ভস্থে অন্যান্য পরিষেবার লাইন চিহ্নিতকরণ ও অপসারণ করা। প্রকল্প শুরুর আগে যে কাজগুলো রয়েছে তা স্বাভাবিক গতিতে চলছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মুন্সিগঞ্জ অংশের জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব এসেছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি। শ্রীঘ্রই জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে।

এর আগে ২০১৯ সালে ২২ জুন জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর এক আলোচনায় মুন্সিগঞ্জের যাত্রীদের দুর্ভোগ নিরসনে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কে উড়ালসেতু নির্মাণ বা সড়কটি প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীত করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, মুন্সিগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সড়কটি প্রশস্ত ও সংস্কার করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুন্সিগঞ্জবাসীর প্রতি অত্যন্ত দরদী মনোভাব নিয়ে উড়ালসেতু ও চার লেনের সড়ক করে দিচ্ছেন। গত বছর একনেকে প্রকল্পটি পাশ হবার পর দরপত্র আহ্বানসহ অন্যান্য কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটবে।

error: দুঃখিত!