মুন্সিগঞ্জ, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী নিয়ম না মেনে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ায় মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে শোকজ ও একদিনের মাথায় ঘোষিত ৪টি ইউনিট ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছে মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। অন্যদিকে জেলা ছাত্রলীগের এমন সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’, ‘অন্যয্য’ ও ‘জুলুম’ উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুবিচার চেয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টংগিবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগকে শোকজ ও ৪ ইউনিট কমিটি স্থগিতের তথ্য জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্দেশনা না মেনে গেল ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ না করায় পরদিন ৫ জানুয়ারি টংগিবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দিপু মাঝিকে শোকজ করা হয়। ৬ জানুয়ারি তিনি শোকজের জবাবে অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করেন। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের তদন্তে এই দাবি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে প্রমাণিত হয়।
পরবর্তীতে ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুমতি ব্যাতীত ও জেলা ছাত্রলীগকে অবহিত না করে সম্মেলন ব্যতীত উপজেলার ৪টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
ঘোষিত ওই ৪টি কমিটি স্থগিত করে টংগিবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিকে শোকজ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
স্থগিত করা কমিটিগুলো হলো- যশলং, ধীপুর ও কামারখাড়া ইউনিয়ন শাখা এবং বালিগাঁও আমজাদ আলী কলেজ শাখা। গত ১৭ জানুয়ারি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খালিদ হাসান খান ও সাধারণ সম্পাদক দিপু মাঝির স্বাক্ষরে ৪টি পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিলো।
গঠণতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুমতি ব্যাতীত ও জেলা ছাত্রলীগকে অবহিত না করে কমিটি ঘোষণার কথা স্বীকার করে টংগিবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দিপু মাঝি বলেন, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে আমি অসুস্থ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন আমি অসুস্থতাজনিত কারনে উপস্থিত হতে পারিনি। এরপর আমি শোকজের জবাবে সকল ডাক্তারি রিপোর্ট জমা দিয়েছি। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগ অন্যয্যভাবে আমার উপর বারবার দায় চাপাতে চাইছে।
দিপু বলেন, সামনে উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন। সেই নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করার লক্ষ্যে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে আমরা ৪টি ইউনিটের কমিটি দিয়েছি। এখন জেলা ছাত্রলীগ জুলুম করে একতরফা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে এর সুবিচার চাইবো।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খালিদ হাসান খান বলেন, ২০১৯ সালের কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই জেলা ছাত্রলীগের সাথে আমাদের দূরত্ব। ২ বছর ধরে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিলেও নানা অযুহাতে তা অনুমোদন দেয়নি জেলা ছাত্রলীগ। গতকাল আমরা বাধ্য হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির উপস্থিতিতে এই কমিটি ঘোষণা করি। ফোনে আমরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকেও জানিয়েছি।
খালিদ আরও বলেন, যখন থেকে আমি নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছি। তখন থেকে তারা আমার উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তাদের অনৈতিক আবদার রাখতে না পারায় জুলুম করে আমাদের উপর এখন এই ধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা বলেন, শোকজের জবাব মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির কাউকে অবহিত না করে কমিটি দেয়ায় ছাত্রলীগের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে শোকজের যথাযথ জবাব না পাওয়া গেলে পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল বলেন, টংগিবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দিপু মাঝি অসুস্থতা দেখিয়ে যে কাগজপত্র জমা দিয়েছে আমরা সেটি তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণ পেয়েছি। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে কমিটি দেয়ার যে কথা তারা বলছে সেটিও মিথ্যা। আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে কথা বলেছি।
পাভেল আরও বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খালিদ হাসান খান নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে কোথায় ঘোষণা করেছেন জানিনা। এখনো জেলা ছাত্রলীগের কোন সম্মেলনের তারিখই ঘোষণা করা হয়নি। তারা যে উপজেলা কমিটি জমা দিয়েছিলো সেখানে বিএনপি-জামায়াতের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত একাধিক ব্যক্তি থাকায় পুনরায় কমিটি দিতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু পরে আর তারা কোন কমিটি জমা দেয়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করে কমিটি দেয়ার কথাও সত্য নয়।