প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, ঝিনাইদহে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আজাদ রহমান ও স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত সরকার জামিন পেয়েছেন। ঝিনাইদহের বিচারিক হাকিম আদালত গতকাল মঙ্গলবার তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেন।
সরকারের ভর্তুকির টাকায় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় ১৫টি কলের লাঙল কেনায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমান, আজাদ রহমান ও সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ আদালতে আটটি মানহানির মামলা করা হয়। মামলাগুলোর বাদী কলের লাঙলের জন্য নির্বাচিত স্থানীয় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
একই ঘটনায় আজাদ রহমান ও সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি চাঁদাবাজির মামলাও করা হয়। এর একটির বাদী কলের লাঙলের ডিলার, অন্যটির বাদী যুবলীগের একজন কর্মী।
মানহানির পাঁচ মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন মতিউর রহমান। আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম আলোর সম্পাদককে এই পাঁচ মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। মানহানির বাকি তিনটি মামলার তদন্ত চলছে।
অন্যদিকে আজাদ রহমান ও সুব্রত সরকার মানহানির ওই পাঁচটি মামলাসহ চাঁদাবাজির পৃথক দুটি মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
আদালতে বিবাদীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজিজুর রহমান, শফিউল্লাহ, এস এম মশিউর রহমান, মো. আমিনুল ইসলাম ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার। শুনানি চলাকালে আদালতে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী, সাংবাদিক ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৭ মে প্রথম আলোয় ‘কলের লাঙলের ভর্তুকির টাকার সিংহভাগ সরকারি দলের নেতাদের পকেটে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই দিনই কৃষি মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ১৬ জুন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেন, প্রথম আলোর খবর অসত্য। পরদিন তিনি আবারও সংসদে বিবৃতি দেন। এরপর প্রথম আলো পুরো বিষয়টি আবারও অনুসন্ধান করে। তার ভিত্তিতে ২ জুলাই ‘প্রথম আলোর খবর অসত্য নয়, এখনো পাঁচজন লাঙল কেনেননি’ শিরোনামে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ৩ জুলাই আগের তদন্ত দল আবারও কোটচাঁদপুরে যায় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে। ৫ জুলাই কৃষিমন্ত্রী সংসদে তৃতীয়বারের মতো বিবৃতি দেন। দুই দিন পর ৭ জুলাই কলের লাঙল বিক্রেতা আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোর ঝিনাইদহের নিজস্ব প্রতিবেদক আজাদ রহমান ও স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর ১২, ১৩ ও ২৬ জুলাই যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বাদী হয়ে প্রথম আলোর সম্পাদকসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আটটি মানহানির মামলা করেন। ১২ জুলাই আজাদ রহমান ও সুব্রত সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। এ বিষয়ে ৪ আগস্ট প্রথম আলো ‘কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা’ শিরোনামে সম্পাদক মতিউর রহমানের লেখা একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে।