মুন্সিগঞ্জ, ২৫ জুলাই ২০২৩, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেপ্তার জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়ার শীর্ষ নেতাসহ আটক তিনজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে মুন্সিগঞ্জ আমলি আদালত-৬ এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
এর আগে বিকাল ৩ টার দিকে পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বুধবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
আসামিরা হলেন, জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান (৩২), সহযোগী কাজি সিরাজ উদ্দিন সরাজ (৩৪) ও মাহফুজুর রহমান বিজয়(২৮)।
মুন্সিগঞ্জ আদালতের পরিদর্শক মো. জামাল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গেল শুক্রবার মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বড় নওপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকার কথা বলে বাড়ি ভাড়া নেন আটক ব্যক্তিরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সোমবার ভোরে এ তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই তিন জঙ্গির কাছ থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রপন্থী বই ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জঙ্গি সংগঠনের আমির আনিসুর জামাতুল আনসার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পড়া শেষ করে আনিসুর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকার একটি সিএনজি পাম্পে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি এর আগে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্যও ছিলেন। চাকরি করার সময় কুমিল্লার একটি খাবারের দোকানে জামাতুল আনসারের আমির মাইনুল ইসলাম (রক্সি) ও ফেলানী নামে দুই সদস্যের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
২০২১ সালে মাইনুল গ্রেপ্তার হলে আনিসুর আমির হন। পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানের সময় তাঁর সঙ্গে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের পরিচয় হয়। এই সূত্র ধরে কেএনএফের ছত্রচ্ছায়ায় বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়। আনিসুরের নির্দেশনায় জামাতুল আনসারের জন্য কেএনএফের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়। এসব অস্ত্র জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আটজন তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। তাঁদের খুঁজতে গিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পার্বত্য এলাকা ও সমতলের বিভিন্ন স্থান থেকে এই জঙ্গি সংগঠনের ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য, সামরিক শাখা, অর্থ শাখা, মিডিয়া ও দাওয়াতি শাখার প্রধান রয়েছেন।
র্য্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তার সরাজ একটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষে পটুয়াখালীতে ব্যবসা করতেন। তিনি ২০০৪ সালে জঙ্গি সংগঠন হুজিতে যোগ দেন। হুজির কার্যক্রম স্তিমিত দেখে ২০১৪ সালে তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি জামাতুল আনসারে যোগ দেন। আর মাহফুজুর রহমান সিলেটের জগন্নাথপুরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৮ সালে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন।