বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে জাতীয় কমিশন গঠনের জোরালো দাবির মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার সারাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। দেশজুড়ে নানা কর্মসূচিতে বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবিও উঠেছে। এদিন গোটা জাতি গভীর শোক আর বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণের পাশাপাশি তার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় শপথও নিয়েছে।
এবার জাতির জনকের শাহাদাতের ৪০ বছর পূর্তি হওয়ায় দিনটি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দেশজুড়ে ছিল ব্যাপক কর্মসূচি। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দুই জায়গাতেই ছিল লাখো মানুষের ঢল। নেতাকর্মী ছাড়াও শিশু, তরুণ, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ এসেছিল ফুল হাতে। সর্বত্র বিরাজ করে শোকের আবহ।
এদিন ছিল সরকারি ছুটির দিন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। আওয়ামী লীগ ৪০ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন ছাড়াও জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ও সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতিহা পাঠ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
সকাল সাড়ে ৬টার কিছু পরে ধানম ির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারা সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং জাতির জনকসহ পঁচাত্তরের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এর পর শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়েও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। মন্ত্রিসভার সদস্য ছাড়াও তিন বাহিনীর প্রধানগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ ১৪ দল নেতারাও শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ধানমৃিতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনের ভেতরে যান। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে ঘাতকদের গুলিতে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে ছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন শোকাহত দুই বোন। সেখানে ঘুরে ঘুরে তারা বাবার স্মৃতিচিহ্নও পরিদর্শন করেন। পরে ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে জাতির জনকের জন্য দোয়া করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রায় আধাঘণ্টা বঙ্গবন্ধু ভবনে অবস্থান শেষে প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে গিয়ে তার পরিবারের অন্য সদস্য, স্বজনসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের সমাধিতেও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। সমাধিতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। এর পর পবিত্র ফাতিহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। এখানেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানাসহ আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন দল ও সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কবরস্থান-মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু ভবন ও বনানীতে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, দলের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সতীশ চন্দ্র রায়, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, আবদুল মান্নান খান, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মৃণাল কান্তি দাস, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল অভিবাদন জানায়। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াসহ অন্যরাও বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাদ আসর বঙ্গভবনে মিলাদ মাহফিলে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মিলাদে যোগ দেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা সাইফুল কবির।
বঙ্গবন্ধু ভবনের চিত্র: ভোর থেকে রাজধানীর সব পথ যেন মিশে গিয়েছিল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটির দিকে। ওই সময় থেকেই জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দলের নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। হাতে কালো ব্যানার ও বুকে কালোব্যাজ পরে নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষ সারিবদ্ধভাবে দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলেন জাতির জনকের প্রতি প্রাণের অর্ঘ্য নিবেদনের জন্য। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ভবন পেরিয়ে রাসেল স্কয়ার থেকে কলাবাগান পর্যন্ত শোকাহত মানুষের ঢল লক্ষ্য করা যায়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৭টার দিকে ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরে দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির বেদি। এ সময় শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যেও জোরালো কণ্ঠে উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিটি। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় গোটা বঙ্গবন্ধু ভবন চত্বর।
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় মহিলা সংস্থা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বিএমএ, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর, তথ্য কমিশন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, নজরুল ইনস্টিটিউট, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, কচি-কাঁচার মেলা, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, বিসিএস বেতার কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, গণজাগরণ মঞ্চ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন ।
বাদ আসর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুলসহ মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগ নেতারা এতে যোগ দেন।
এর আগে সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। সন্ধানী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ইউনিটসহ আরও কয়েকটি সংগঠন একই স্থানে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে।
সারাদেশে শোকের চিত্র: রাজধানীসহ সারাদেশে শোকের প্রতীক কালো পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড ও তোরণ নির্মাণ করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। সব মিলিয়ে দেশজুড়েই ছিল শোকের আবহ। অলিগলিতে মাইকে বেজেছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান ও কবিতা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণামূলক গানও প্রচার হয়। থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লাগুলোতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের উদ্যোগে দিনব্যাপী কোরআনখানি, মোনাজাত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটগুলো।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ অন্যরা।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরের সেবায়েত প্রদীপ কুমার চক্রবর্তীর পৌরহিত্যে প্রার্থনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অ্যাডভোকেট বীরেন সিকদার, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, অপু উকিল, ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, কাজল দেবনাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, জে এল ভৌমিক, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, নারায়ণ সাহা মনি প্রমুখ। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে এদিন ক্লাব লবিতে জাতির জনকের প্রতিকৃতি স্থাপন, শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল করা হয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে শোক সমাবেশ করেছে। এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সর্বধর্ম প্রার্থনা সভা’র আয়োজন করে ‘সাংবাদিক সমাজ’।
পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরের বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদসহ অন্যরা এতে যোগ দেন।
আরও কর্মসূচি: বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সরকারি-বেসরকারি রেডিও এবং টিভি চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। পোস্টার, সচিত্র বাংলাদেশের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ ও বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের ৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দিবসটি পালনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
রাজধানীর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত সবসময় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। সবাইকে ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নূর হোসেন তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক, বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান প্রমুখ।
ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিরতণ করেন। আরও বক্তৃতা করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন,সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার প্রমুখ। এ ছাড়া ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত শেষে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে শোক দিবসের আলোচনা সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সমুন্নত রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শোক দিবস উপলক্ষে মন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি, কমলাপুর রেলস্টেশন, কমলাপুর আইসিডি, মতিঝিল কলোনি কমিউনিটি সেন্টার, শাহজাহানপুর আমতলা, শান্তিনগর বাজারসহ বিভিন্ন স্পটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিরতণ করেন।
মোহাম্মদপুরে সরকারি কৃষি পণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাদেক খান, হাবিবুর রহমান মিজান, শহিদুল্যাহ, তারেকুজ্জামান রাজীব প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানসহ অন্যরা যোগ দেন। বিয়াম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতায় জনপ্রশাসন সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তাকে নিয়ে গবেষণা থাকতে হবে। শুধু ইতিহাস নয়, কয়েক দশকের মধ্যে বাংলা সাহিত্যেও অনন্য চরিত্র হিসেবে স্থান করে নেবেন এই মহান নেতা।
মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে এফবিসিসিআইর শোক দিবসের আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম আহমেদ, দেওয়ান সুলতান আহমেদ প্রমুখ। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ দোয়া মাহফিল ও গণভোজের আয়োজন করা হয়। ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীসহ অন্যরা বক্তৃতা করেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের উদ্যোগে ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন কাজী নাবিল আহমেদ, ড. তপতী রানী সরকার, অধ্যাপক কাজী মদিনা, আরজু ইসলাম, জামাল উদ্দিন ভঁূইয়া প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণভোজের আয়োজন করে সড়ক পরিবহন ও শ্রমিক লীগ। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি রাজধানীর রাজউক এভিনিউয়ে কোরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনা সভা, মিলাদ ও তবারক বিরতণ করেছে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সফিউল্লাহ সফির সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, মোজাফফর হোসেন পল্টু, অপু উকিল, আবুল বাশার, রুহুল কুদ্দুস তপন, ইসমাইল হোসেন, মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।