৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রবিবার | ভোর ৫:২০
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
চোখে আলো নেই, তবু হৃদয়জুড়ানো মায়াভরা কণ্ঠে গেয়ে চলেছেন গান
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২০ নভেম্বর ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

হৃদয়জুড়ানো মায়াভরা কণ্ঠে গেয়ে চলেছেন নজরুল। দেখে বোঝার উপায় নেই জন্মগতভাবে চোখে দেখার শক্তি নেই তার।

প্রায় দেড়শো বছর আগে এই পরিবারে জন্ম নেন দৃষ্টিশক্তিহীন খোদাবক্স ফকির। তখনো বুঝে উঠতে পারেননি তার বংশের পরবর্তী সকল প্রজন্মকেই বয়ে বেড়াতে হবে এই ধারা। চোখে না দেখলেও মায়াভরা কণ্ঠ ছিলো খোদাবক্স ফকিরের। তার গান শুনতে দূরদুরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসতেন নিয়মিত। বাড়িতে বসতো বাউল ও পালাগানের আসর। 

জীবন ও জীবিকার অন্য কোন বিকল্প না পেয়ে বাউল গানকে বেছে নেন খোদাবক্স। এরপর বংশ পরিক্রমায় জন্ম নেন কাদির ফকির। জন্ম নেয়ার পর দেখা যায় আলো নেই তার চোখেও। তিনিও জীবন-জীবিকার উৎস হিসেবে বাধ্য হয়ে বেছে নেন গান।

তার পরবর্তী প্রজন্মে জন্ম হয় মারফত আলী বয়াতির। যিনি রচনা করে গেছেন ১২শ গান। ছিলেন নামকরা গায়ক। জন্ম থেকে তার চোখেও ছিলো না আলো।

মারফত আলী বয়াতির গানের গলার সুনামও ছিলো এই অঞ্চলজুড়ে।

বর্তমানে তাদের এই বংশের রেওয়াজ ধরে রেখেছেন মারফত আলী বয়াতির পরবর্তী প্রজন্ম নজরুল ইসলাম। খোদাবক্স থেকে মারফত আলী হয়ে বর্তমান নজরুল ইসলামের পরিবার প্রায় দেড়শো বছরের ঐতিহ্য আর মায়ামধুর গানের গলা অভিভূত করে চলেছে মানুষকে। 

নজরুল একা নন বর্তমানে এই পরিবারের ২০ জন জীবিত রয়েছেন যাদের জন্মগতভাবে চোখে দেখার মত শক্তি নেই। এর মধ্যে ৪ জন গানের পেশায় জড়িত, বাকিরা এদের উপর নির্ভরশীল। 

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার আউটশাহি ইউনিয়নের মামারদুল এলাকায় বসবাস এদের। এই পরিবারের দৃষ্টিশক্তিহীন শিশু সদস্য যারা বর্তমানে বড় হয়ে উঠছেন গান গাওয়ার সময় তাদেরও পাশে বসিয়ে রাখছেন গানের দলের সদস্যরা।

বাউল দলের সদস্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সেন্টু শেখ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অবাধ আধুনিকায়নের প্রভাবে কমেছে বাউল-সাধু গানের চাহিদা। এতে কোনরকমে দিন পার হচ্ছে আমাদের।

এই দলে হারমোনিয়াম বাজানোর কাজ করেন দৃষ্টিশক্তিহীন মিন্টু আর মন্দিরা বাজান হৃদয়।

ছোটবেলায় লেখাপড়ার ইচ্ছা থাকলেও পারিপার্শ্বিকতার কারণে তাও হয়ে উঠেনি নজরুলের।পারিবারিক পরিক্রমায় বাউল-সারি গানের বর্তমান এই পেশাটিই তাদের জীবন ও জীবিকার একমাত্র উৎস

এক রাতে গান গেয়ে ১৫-২০ হাজার টাকা পান নজরুলের নেতৃত্বে এই গানের দলটি। তাদের সাথে স্থানীয় আশিক ঢোল বাদক ও রিপন মণি ট্রাম্পেট বাশি বাজানোর কাজ করেন।

বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতির অংশ বাউল গান। দৃষ্টিশক্তিহীন নজরুল মনে করেন, বাউল গানে রয়েছে জীবন আচারের দিকনির্দেশনা। আবহমান বাংলার প্রকৃতি, মাটি আর মানুষের জীবন জিজ্ঞাসা একাত্ম হয়ে ফুটে ওঠে বাউল গানে। আরো ফুটে ওঠে সাম্য ও মানবতার বাণী।

এই বিভাগের সর্বশেষ
ফেইসবুকে আমরা
ইউটিউবে আমরা
error: দুঃখিত!