মুন্সিগঞ্জ, ৩ মার্চ, ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
বাংলাদেশের যে জেলাগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে যায় তার মধ্যে মুন্সিগঞ্জ অন্যতম। তাই মুন্সিগঞ্জ থেকে বিদেশগামীরা যাতে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিদেশে যেতে পারে সেই লক্ষ্যে গেল বছরের জুলাই মাসে মুন্সিগঞ্জ সদরের মহাকালি ইউনিয়নের কেওয়ার লোহারপুল বাজারের পাশে ১.৫ একর জমির উপর ২২ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) উদ্বোধন করা হয়।
কিন্তু উদ্বোধনের পর ৮মাসেও চালু হয়নি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির কার্যক্রম। এর মাঝে ২-৩ মাস মেয়াদী ৭টি পৃথক বিষয়ভিত্তিক নারী-পুরুষ আবাসিক/অনাবাসিক ট্রেডের বিপরীতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর অনেকেই আগ্রহ নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করেন।
এরপর তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ শুরুর তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানায় কতৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘ মাস অপেক্ষায় থাকার পরও ফোন পাননি কেউই। কেউ কেউ প্রশিক্ষণ না নিয়েই চলে গেছেন বিদেশে।
প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী একাধিক বিদেশগামীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে করে টিটিসি সেন্টারটির কোন সুফল এখনো ভোগ করতে পারেনি মুন্সিগঞ্জবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এরপর গেল বছরের গত ২৮ জুলাই সারাদেশের আরও ২৮টি উপজেলার সাথে মুন্সিগঞ্জের টিটিসি সেন্টারটিও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেসময় ভাবা হয়েছিলো, উদ্বোধনের পরপরই এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি খুলে দেয়া হবে। ফলে মুন্সিগঞ্জবাসী এর সেবা ভোগ করতে পারবে। বিনামূল্যে বেকার যুবকরা বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে।
কিন্তু উদ্ধোধনের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়নি টিটিসি মুন্সিগঞ্জে।
গেল বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুধুমাত্র বিদেশগামী কর্মীদের ৩ দিনের প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণটি চালু হয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দেশের স্বাস্থ্যবিধি, আবহাওয়া, প্রয়োজনীয় আইন-কানুন, কর্মপরিবেশে করণীয়, টাকা পাঠানোর বৈধ উপায়, বিপদে পড়লে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগের নিয়ম ও দালালদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়গুলো শেখানো হয়।
কিন্তু টিটিসির যে মূল কার্যক্রম যেমন- আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান, গার্মেন্টস, ইলেক্ট্রিক্যাল, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনার, মেশিনটুলস অপারেশন, অটোড্রাইভিং, সিভিল কন্সট্রাকশন সেগুলো এখনো শুরু হয়নি।
মুন্সিগঞ্জ সদরের বিদেশগামী যুবক সাইফুল ইসলাম শিথিল জানান, আমি গেল বছরের সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞাপন দেখে অটোড্রাইভিং কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। তবে সেখান থেকে আর কোন ফোন পাইনি। এরপর আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকটি কোর্স সম্পন্ন করেছি। টিটিসি চালু হলে বাড়ির কাছ থেকেই সরকারিভাবে প্রশিক্ষণগুলো পেতাম। বিদেশে না যেতে পারলেও দেশেই স্বাবলম্বী হতে পারতাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) মুন্সিগঞ্জের প্রিন্সিপাল ও ইনচার্জ শাহনাজ আকতার জানান, বর্তমানে বিদেশগামী কর্মীদের ৩ দিনের প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ চলছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ট্রেডগুলো এখনো চালু হয়নি। কবে নাগাদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি পুরোপুরি চালু হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।