মন্তব্য প্রতিবেদন: দৃষ্টিভঙ্গি। যে কোন কিছুকেই ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভাবে দেখা যায় এটা দিয়ে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যাক্তিত্বের উপরও নির্ভর করে এবিষয়টা। ১৩আগষ্ট ছিলো মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলাজুড়ে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। সেখানে মুন্সীগঞ্জে কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার অনেকেই ছিলেন। আবার একান্ত ডিসি’র সাথে অন্তর্দ্বন্দে’র কারনে ছিলেন না অনেকেই। ছিলোনা কোন টিভি চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধিরাও। এমনকি পুরো অনুষ্ঠানে মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় একটি রেডিও ছাড়া ছিলোনা কোন চ্যানেলের বুম (মাইক্রোফোন/রেকর্ডার)।
তবে সেখানে কেউ কেউ তাদের ভাড়া করা ক্যামেরামান পাঠিয়েছিলেন মাত্র। যার ফলে অনুষ্ঠানটি’র বাস্তবিক গুরুত্ব থাকলেও তেমন গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেনি দেশের কোন টিভি চ্যানেলই। মূলত জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদলের সাথে কিছু সাংবাদিকের দ্বন্দের কারনে জেলা থেকে কেউ সংবাদ পাঠায়নি বলেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সংবাদটি গুরুত্বের সাথে টিভি চ্যানেলগুলি প্রকাশ করতে পারেনি।
তবে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মইনউদ্দিন সুমন এনটিভি’র অনলাইন সংস্করনে একটি নিউজ ঠিকই পাঠিয়েছেন। যার সারাংশ হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গাছের চারা কিনতে ১০টাকা করে কেন নিয়েছেন! একজন মন্ত্রী মুন্সীগঞ্জে আসলেন, ৬লক্ষ গাছ একদিনে মুন্সীগঞ্জে বিতরন করা হলো, ৬লক্ষ গাছের চারা কেনার অর্থ ভিন্ন কোথা থেকে আসতে পারে এসবের চেয়ে মইনউদ্দিন সুমন এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০টাকা করে কেন নিলেন!
মূল বিষয়টা কিন্তু লোক দেখিয়ে চারা লাগানো না। মূল বিষয়টা হচ্ছে সমাজের একদম তৃণমূল পর্যায়ে বার্তা দেয়া। একটি চারা দিয়ে একটি পরিবারের কাছে বার্তা দেয়া। একটি স্কুলে অনেক গ্রামের ছেলে-মেয়ে থাকে। সেসব গ্রামে একজন জেলা প্রশাসক বা একজন কৃষিমন্ত্রী’র যাওয়া সম্ভব না। তবে এভাবে ঐ একই বার্তা খুব সহজে দেয়া সম্ভব। উচ্চ শিক্ষিত যে কেউ এই যুক্তির সাথে অনায়াসে একমত হবেন আশা করি। আবার বিষয়টা এমনও না ১০টাকা দিতে গিয়ে কারো খুব কষ্ট হয়েছে বা কেউ অনেক বেশি কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় একটি গাছের চাড়া’র জন্য ১০টাকা খরচ করা খুব আশ্চর্যজনক কিছু না। তবে সত্যিই আশ্চর্যজনক মইনউদ্দিন সুমন এর প্রতিবেনটি। চারা কেনার জন্য ১০টাকা নিলে আসলে ক্ষতি কার?
একটি গল্প বলি। এক লোক অষ্টম শ্রেণী পাশ করে বিয়েতে ভিডিও করতেন। কিছুদিন বিয়ের ভিডিও করার পরে তার এবার সখ হলো সাংবাদিকতা করার। ভালো কথা। তিনি শুরু করলেন। বিভিন্ন ঘটনার ছবি তুলতে তুলতে তার বেশ জনপ্রিয়তাও হলো। তিনি নিজে কোনদিন কোন সংবাদে তার নাম পর্যন্ত লিখতে না পারলেও সবাই তাকে সাংবাদিক নামেই চিনলো। তার সখও পুরন হলো।
একবার তার কর্মস্থল থেকে বলা হলো তাকে একটি প্রতিবেদন লিখে পাঠাতে। এবার ঘটলো বিপত্তি। তিনি লোক ভাড়া করে আনলেন। প্রতিবেদন লেখালেন। কিন্তু যিনি প্রতিবেদন লিখলেন প্রতিবেদনে তার নাম আর থাকলোনা। নামের জায়গায় হয়ে গেল যিনি তাকে ভাড়া করে আনলেন তার নাম। এভাবে চলতে থাকলো। কত ভাড়াটে লোক এলো গেলো। যে একবার গেছে সে আর কখনো মুখ দেখাতেও আসেনি। একপর্যায়ে আর কাউকে ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আবিষ্কার করলেন নতুন এক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কাউকে ভাড়া করতে হয় না। যেহেতু ভাড়া করতে হচ্ছে না কাউকে সেহেতু যাদের ভাড়া করে আনা হতো তাদের কাছেও তাকে আর লজ্জ্বায় পড়তে হচ্ছে না। এবার বলি পদ্ধতিটা’র কথা। তথ্য-পযুক্তির উৎকর্ষতা’র এযুগে তাকে একজন শিখালেন গুগলিং করা। কিভাবে গুগলে সার্চ করে অন্যের নিউজ সংগ্রহ করে কেটেকুটে নিজের নাম বসিয়ে দেয়া যায়। ব্যাস তাকে আর পায় কে। চলতে থাকলো। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এবার তার প্রভাবটা আরেকটু বাড়াতে হবে। বাসা থেকে ১লক্ষ টাকা যোগাড় করে একটি টিভি চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি হয়ে গেলেন। ব্যাস। এবার তাকে আপনিও সাংবাদিক ডাকতে বাধ্য হলেন।
কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদতো দিতেই হবে। ধন্যবাদ।
লেখক: সিরাজুল মুনীর,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পাঠকের মুখোমুখি বিভাগে প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার সংশ্লিষ্ট লেখকের। যেহেতু এটি মতপ্রকাশের উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সেহেতু এই বিভাগে প্রকাশিত যে কোন কন্টেন্টের দায়িত্ব পত্রিকা কতৃপক্ষ বহন করে না।