গে ম্যারেজ! আজকের আলোচ্য বিষয়। আমার ফেসবুকে প্রোফাইল পিক চেঞ্জের (রংধনুর রং ) মাধ্যমে আমি বিষয়কে সাপোর্ট করেছি! সমকামিতা বিষয় নিয়ে আমার আগে জঘন্য রকমের একটা ধারণা ছিল। “ এ মা! ছি! ছি!” টাইপের । যখন আমি বিষয়গুলো জানলাম এবং কিছু মানুষের সংস্পর্শে আসলাম, আমার ধারণা বদলাল। সেই বদলানো ধারণার কিছু কথা বলি।
যারা সমকামিতাকে মানসিক রোগ বলে ঘেঁটে দিতে চান, তাদেরকে প্রথম কথা, ইহা জেনেটিক ভেরিয়েশন হতে পারে, কিন্তু মানসিক রোগ না! আগে এটাকে মানসিক রোগ বলা হত। ফরেনসিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাস্টারবেশনকে তো সেক্সুয়াল পারভারশন বলা হয়, তা যদি হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবীর প্রত্যেকটি পুরুষ- নারী পারভারট এবং মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। কারণ আমার জানামতে হস্তমৈথুন কিছু কিছু ছেলে- মেয়েরর কাছে দৈনিক ডালভাতের মত।
সমকামি একটা মানুষ ডিফারেন্ট কিছু না। আমাদের মতই হাঁটা চলা করে। শুধু তাদের যৌনজীবনের আকর্ষণ হোমোসেক্সুয়ালিটি। পৃথিবীতে সবার কাম attitude এক হবে না, কেউ বামহাতি, কেউ ডানহাতি। মানে আমি বলতে চাচ্ছি, ভেরিয়েশন আমাদের হিউম্যান বিয়িং এর একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কেউ আমরা কারও মতো নই, তার অর্থ এই নয়, আমি ভালো ও খারাপ। আমি সুস্থ, সে পাগল! জাস্ট সামাজিক অপপ্রচার এবং নিজেদের মূল্যবোধের বাইরে বেরতে না পারার ব্যর্থতায় এটা বিশ্বাস করে, যে সমাকামিরা পাগল, মেন্টাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। কিন্তু সমকামি জাস্ট সেক্স ভেরিয়েশন ছাড়া কিচ্ছু না।
এইডস বা STD হবার সম্ভাবনা সমকামীদের মধ্যে প্রচুর বলে সমাকামিতাকে নিষেধ করা হয়। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, যথেচ্ছ যৌনাচার এবং অনিরাপদ সম্পর্ক যারা বিষকামী (straight) তাদের মধ্যে হবার সম্ভাবনাও প্রচুর। নিরাপদ যৌনসম্পর্ক এবং contraceptive মেথডের সঠিক ব্যবহার করলে সমাকামিরা সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে।
শেষ কিছু কথা বলি, গম্ভীর কথার বাইরে। যারা ভাবেন প্রকৃতি বলে দিয়েছে পুরুষ-নারীর বিয়ে হতে হবে, তারা বংশবিস্তার করবে, প্রকৃতির নিয়ম এটাই! কথা হলো, আমরা কি প্রকৃতিবিরুদ্ধ হই না? প্রকৃতি আমাদের সীমাবদ্ধতা দেয়নি? কে জানত মানুষ উড়তে পারবে একদিন? প্রকৃতি তো মানুষকে উড়ার ক্ষমতা দেয়নি! যারা অন্ধ, যারা বোবা, যারা পঙ্গু তারা তো প্রকৃতির দান! সেটাই তো স্বাভাবিক! আমরা তাহলে অন্ধদের চোখ প্রতিস্থাপন করে চোখ সারাবার চেষ্টা করি কেন? শুধু যৌনতাই কেন প্রকৃতির অনুযায়ি হতে হবে ? সেটাও মানুষের নিজের মত লিড করার অধিকার থাকবে না কেন ?
জীবন একটাই, একটা মানুষ নিজের ইচ্ছামত সেটা লিড করতে পারে। নিজের ইচ্ছামত যৌনজীবন কাটাতে পারে, আমাদের সেখানে বলার কিচ্ছু নাই! মানুষ স্বাধীনসত্তা! সমকামিদের জীবন- যাপন নিয়ে আমাদের কোন বিস্ময়তার জায়গাই নেই! আমরা আমাদের মত কাটাচ্ছি, তারা তাদের মতন! স্বাভাবিকতা অস্বাভাবিকতা আমাদের দৃষ্টি এবং চিন্তার সীমাবদ্ধতা কেবল।
আমেরিকাকে ধন্যবাদ এরকম একটা প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের জন্য। হ্যাঁ, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বিষেদ্গার থেকেই হোক আর যৌনতাকে অন্যভাবে দেখার প্রয়াসই হোক, একটা মানুষ যখন সমলিঙ্গ প্রেম গ্রহণ করে নিয়েছে, তাঁকে উচিত সেই অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে দেওয়া। গে ম্যারেজ আইন বাস্তবায়ন হওয়া, মানুষের সেই অধিকারের জয় হবার কথাই বলে।
লেখক : মারজিয়া প্রভা