১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | দুপুর ১২:০৭
গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ ভবন, শিক্ষকসংকট
খবরটি শেয়ার করুন:

শিক্ষকের পদ সাতটি। কারণে-অকারণে বদলির পর আছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক। এ ছাড়া যে শ্রেণিকক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বসে, তা-ও ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুই সমস্যায় জর্জরিত মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩০। শিক্ষকের সাতটি পদ থাকলেও বর্তমানে আছেন প্রধান শিক্ষকসহ মাত্র তিনজন। প্রধান শিক্ষককে প্রায়ই বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান ও স্কুলের কাজ নিয়ে উপজেলা সদরে দৌড়াতে হয়। ফলে দুজন সহকারী শিক্ষককে ক্লাসসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য কাজ সামলাতে হয়।
শিক্ষকসংকটের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের দুষছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগেও গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন পাঁচজন। ২০১৪ সালের মধ্যভাগে শারমিন আক্তার নামের এক সহকারী শিক্ষককে প্রেষণে উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের চরবিশ্বনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। অথচ ওই বিদ্যালয়ে তখন শিক্ষকের সাতটি পদই পূর্ণ ছিল। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে গুয়াখোলা সরকারি বিদ্যালয়ের সুফিয়া আক্তার নামের এক সহকারী শিক্ষককে উপজেলার থরিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘থরিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৭৫ জন শিক্ষার্থী। সেখানে সাতটি পদের বিপরীতে ছয়জন শিক্ষক আছেন। বাকি পদটি পূরণ করতে আমাদের বিদ্যালয় থেকে একজনকে বদলি করে নেওয়া হলো। অথচ আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ওই বিদ্যালয়ের তিন গুণ।’
শিক্ষক সূত্রে আরও জানা যায়, গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবনে দুটি ও পুরোনো ভবনে চারটি মিলে মোট ছয়টি কক্ষ রয়েছে। নতুন ভবনের দুটি ও পুরোনো ভবনের দুটি কক্ষে পাঠদান চলে। পুরোনো ভবনের আরেকটি কক্ষে বসেন শিক্ষকেরা। অন্য কক্ষটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। পুরোনো ভবনটি একেবারেই নাজুক। বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়ালে ধরেছে ফাটল। বৃষ্টি হলেই দেয়াল ও ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ফলে মাঝেমধ্যেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দিতে হয়। সাত-আট বছর ধরে এই অবস্থা চললেও সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমানউল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষকসংকট ও অবকাঠামো সমস্যার ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বারবার লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছি না। দুজন সহকারী শিক্ষকের একজন কোনো কারণে ছুটি নিলে সেদিন আমাদের বড্ড সমস্যায় পড়তে হয়।’
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সামছুজ্জামান বলেন, এই বিদ্যালয় শিক্ষকসংকটে জর্জরিত। অথচ এখান থেকে শিক্ষক বদলি করে পদ খালি নেই এমন বিদ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। এসব ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করেছে। এসব বদলি নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা কথা শোনা যাচ্ছে।
তবে সিরাজদিখান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে আমাদের অনেক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। নানা মানুষের সুপারিশে দরখাস্ত আসে। এ কারণেই আমাদের এসব বদলির কাজগুলো করতে হয়।’ তিনি জানান, গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছেে।

error: দুঃখিত!