মুন্সিগঞ্জ, ১৫ আগস্ট, ২০২২, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেছেন, নরঘাতক জিয়া-মোশতাকের মিলিত ষড়যন্ত্রেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কালরাতে ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে খুনিচক্র বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করতে চেয়েছিল এবং জাতির পিতার সুমহান আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু জাতির পিতার আদর্শ চিরঞ্জিব; বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অবিচ্ছদ্য অংশ। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও জাতির পিতার অবিনাশী আদর্শ বাঙালির হৃদয় পট থেকে মুছে দিতে পারে নি। বঙ্গবন্ধু সমহিমায় আরও সমুজ্জ্বলভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে।
আজ সোমবার (১৫ আগস্ট) সকালে গজারিয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নবনির্মিত প্রতিকৃতি উন্মোচন এবং পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শোক দিবসের আলোচনা সভাসহ শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী, গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল্লাহ, হাফিজুজ্জামান জিতু, মিজানুর রহমান প্রধান, আবুল খায়ের মোহাম্মদ আলী খোকন, ইঞ্জিনিয়ার সহিদ হোসেন লিটু, কামরুল হাসান ফরায়েজী, সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু, ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নেকি খোকন, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেফায়েতুল্লাহ খান তোতা, আকলিমা আক্তার, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, অধ্যাপিকা ফরিদা ইয়াসমিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এরপর গজারিয়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজিত শোক দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধূর একটি শোকের দিন।
১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবতার দুশমন প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকদের হাতে আমাদের মহান পথ প্রদর্শক, বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, সমকালীন বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা, বিশ্বের লাঞ্চিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের পথিকৃৎ, মুক্তিকামী মানুষের অকৃত্রিম সুহৃদ, সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ উপনিবেশবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ ও বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াকু বীরসেনানী, জোট-নিরপেক্ষ তৃতীয় বিশ্বের অনন্য প্রবক্তা নিরস্ত্রীকরণে বিশ্বাসী শান্তিরদূত, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, আবহমান বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন।
সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল, বঙ্গবন্ধুর আদরের কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, জাতির পিতার জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্ব বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই গভীরভাবে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫-এর ১৫ আগস্টের নিহত সকল শহীদদানকে।
তিনি বলেন, খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। পর্বতের ছবি কাগজে আঁকা যায়। মুছেও ফেলা যায়। কিন্তু বাংলার সিথানে দাঁড়িয়ে আছে যে হিমালয়, তাকে মুছে ফেলা যায় না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকেও নয়। তাঁর সংগ্রামকেও নয়। তাঁর অর্জনকেও নয়। এই অর্জন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই অর্জন মুক্তিযুদ্ধের। বাংলা ও বাঙালি যত দিন থাকবে, এই পৃথিবী যত দিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যত দিন থাকবে তিনি একইভাবে প্রজ্জ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালি হৃদয়েÑ প্রতিটি মুক্তিকামী-শান্তিকামী মানবতাবাদী হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবেÑ পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবনের কেন্দ্র ছিল জনগণ। জনগণের জন্য ভালোবাসা ছিল তার সব কর্মকাণ্ডের প্রেরণা, জনগণের ওপর বিশ্বাস ছিল তার কর্মকাণ্ডের ভিত্তি এবং জনগণের কল্যাণই ছিল তার সব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য। নির্যাতিত-নিপীড়িত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-শোষিত মানুষের মুক্তিই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র ব্রত। আজকের দিনে আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার হোক। বঙ্গবন্ধু যে বাঙালি জাতির কল্যাণে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছেন সেই জাতি ও রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির অর্জনে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করা। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশ বিরোধী, উন্নয়নবিরোধী পরাজিত ঘাতকদের পরাভূত করা।