৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | সকাল ৯:১৯
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
খরচ বাড়বে জীবনযাত্রার সব খাতেই
খবরটি শেয়ার করুন:

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জন্য বড়ই দুঃসংবাদ। কেননা এর সঙ্গে জীবনযাত্রার প্রায় প্রতিটি বিষয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এর ফলে দেশের জনগণের সার্বিক জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়ে যাবে। উৎপাদন ও পরিবহন খরচ থেকে শুরু করে বাসাভাড়া, যাতায়াত খরচ, ভোগপণ্য, শিক্ষাব্যয় ও স্বাস্থ্যসেবাসহ সবকিছুতেই বাড়তি খরচের খক্ষ নেমে আসবে। দেখা যাবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই অনেক কিছুর দাম এ অজুহাতে বেড়ে যাবে। অতীতে এমন বহু নজির রয়েছে। এদিকে এ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হবে সীমিত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের। যাদের কোনো আয় বাড়বে না, অথচ ব্যয়ের বাজেট বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় হয় তাদের ঋণ করে বাড়তি ব্যয় মেটাতে হবে, নতুবা খরচ কাটছাঁট করতে হবে। আর প্রয়োজনের তুলনায় কম খেয়ে জীবনধারণ করতে গেলে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে পুষ্টিহীনতা আরও বেড়ে যাবে, যা প্রকারান্তরে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পরিসংখ্যানকে উদ্বেগজনক অবস্থায় নিয়ে যাবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ার বিষয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মতামত নিতে গিয়ে সারমর্ম হিসেবে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বদরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সরকার দেশ ও জনগণের উন্নয়ন নিয়ে ভাববে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ভাবনা যদি জনগণের ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিংবা কষ্ট দেয়, তাহলে সেটি অবশ্যই দুর্ভোগের কারণ। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি হচ্ছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু সেটি কতজনের? ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ১৩ লাখ মানুষের বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। এ হিসাবে দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষকে এ বাড়তি ব্যয়ের ভোগান্তিতে ফেলে দেবে। জনগণের সরকার হিসেবে এমন কিছু না করে সরকারের উচিত হবে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।

 অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে বাসায় আমি থাকি তার ভাড়াবাবদ গুনতে হয় ২০ হাজার টাকা। বেতনের বাকি টাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও পারিবারিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে এমনিতেই টাই টাই অবস্থা চলছে। এখন বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে আমার নির্দিষ্ট আয়ে যদি ৫০০ টাকাও অতিরিক্ত খরচ হয়, তাহলে সেটি বহন করতে হবে পারিবারিক চাহিদা হ্রাস কিংবা খাদ্যপণ্যের সঙ্গে আপস করে। আর এটি করতে গিয়ে দেখা যাবে দীর্ঘমেয়াদে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ এ প্রসঙ্গে বলেন, সংসারের বাজেট ১০ টাকার জায়গায় ১২ টাকা হয়ে গেলে সেখানে টান তো পড়বেই। অথচ গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে পারিবারিক ব্যয় বৃদ্ধির সেই ঝুঁকির দিকেই ঠেলে দেয়া হল। তিনি বলেন, এতে করে একদিকে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি স্বাভাবিকভাবে পণ্যের দামও বেড়ে যাবে।

রাজধানীর মধুবাগের বাজার সংলগ্ন নোয়াখালী হাউসের বাসিন্দা গৃহিণী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামীর আয় নির্দিষ্ট। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে এখন থেকে আমাকে গ্যাসের চুলা ব্যবহারের জন্য মাসে অতিরিক্ত ২০০ টাকা গুনতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিলও বেড়ে যাবে। বাসা ভাড়া বৃদ্ধির আশংকাও করছি। এটি হচ্ছে সরাসরি প্রভাব। এর বাইরে কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে অন্য সব খাতে পরোক্ষ ব্যয়ও বাড়বে। এসব বাড়তি ব্যয় কীভাবে সমন্বয় করব, তাই এখন ভাবনার বিষয়।

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিসহ করে তুলবে বলে মনে করেন রাজধানীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতিমা শারমিন। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হবে, এমন ঘোষণার পর বাড়িভাড়াসহ সবকিছুর দাম একবার বেড়েছে। সেটা সামাল দেয়ায় কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বাড়তে যাচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম। আবার বাড়িভাড়া, যানবাহন ভাড়াসহ নিত্যপণ্যের দামও বাড়বে। ফলে আমাদের মতো নিু আয়ের মানুষের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।

প্রাইম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এডিসি ডিভিশনের কাস্টমার সেলস এক্সিকিউটিভ (সিএসই) তন্ময় কুমার বিশ্বাস (লিটন) বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে জ্বলানি তেলের দাম কমছে, সেখানে বাংলাদেশে বাড়ানো হচ্ছে। এটি একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এতে জনজীবনের সার্বিক ব্যয় বেড়ে যাবে।

 তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য হয়তো নতুন বেতন স্কেল দেয়া হবে, কিন্তু সবার আয় তো বাড়বে না। দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষকেই এ বাড়তি ব্যয় নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় থেকে বহন করতে হবে, যা সংসারে টানাটানি সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে আমাদের মতো নিু আয়ের মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে।

কামরাঙ্গীর চর নয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা ও নাভানা রিয়েল এস্টেটের ইনডেনটরি শাখার মো. মামুন জানান, বাড়তি ব্যয়ের কারণে আমার মতো সীমিত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে চরম হিমশিম খেতে হবে। সঞ্চয় তো দূরের কথা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দেবে।

রাজধানীর কমলাপুরের সর্দার কলোনির বাসিন্দা (ব্যাচেলর) ও ঢাকা কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম রেজা বলেন, এখন আমার মেস খরচও বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে মেস ম্যানেজার মাসিক খাদ্যের বিল বাড়ানোর কথা বলেছেন। একই কারণে বাড়বে যাতায়াত ভাড়া ও পড়ালেখার খরচ। এর ফলে পরিবার থেকে আমাকে আরও বাড়তি টাকা পাওয়ার জন্য চাপ দিতে হবে, যা আমার পরিবারের জন্য কঠিন হবে।

error: দুঃখিত!