মুন্সিগঞ্জ, ২২ মে ২০২৪, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে জাল ভোটের তথ্য পেয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টাকালে কেন্দ্রের ফটক বন্ধ করে সাংবাদিককে ঢুকতে দেননি দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দ্বিতীয় দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণকালে উপজেলার পিংরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট আরাফাত রায়হান সাকিবসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকদের সাথে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিক আরাফাত রায়হান সাকিব বলেন, ‘আমাদের একটি সূত্রের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রে জালভোট দেওয়ার সময় দুই প্রতিদ্বন্দী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল ও গাড়ি ভাঙচুরের একটি ভিডিও পেয়ে সেখানে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে ছুটে যাই। কেন্দ্রে গিয়ে এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে জানতে চাইলে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি বলে প্রথমেই বিষয়টি গোপনের চেষ্টা করেন তিনি। এসময় আমিসহ অন্যান্যরা কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান করে উপস্থিত ভোটারদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলে ‘আপনার সময় শেষ’ বলে কেন্দ্র ছাড়তে বলেন প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর আহসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আপনার ১০ মিনিট সময় শেষ, আপনি বের হয়ে যাবেন- এটাই নিয়ম।
আমি তাকে বলি- আমি ভোটকক্ষে ঢুকিনি। ১০ মিনিট অবস্থানের নিয়মটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। এরপরও তিনি বারংবার আমার কাজে বাঁধা দিলে আমি বাধ্য হয়ে ভোটকেন্দ্রের বাইরে এসে গেটের সামনে দাড়িয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভোটারদের সাথে কথা বলতে থাকি। একপর্যায়ে এসব বিষয়ে ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি আমাকে বক্তব্য না দিয়ে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিরাজদিখান থানার সাব ইন্সপেক্টর রতন বৈরাগীকে গেট বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দিলে তিনি ও অন্যান্য আনসার সদস্যরা ভেতর থেকে গেটটি বন্ধ করে দেন। তার এরুপ আচরণে আমি নির্বাচন সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হই।’
আরাফাত আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোট কক্ষের ভিতর একসাথে দুইজন সাংবাদিক ১০ মিনিটের বেশি থাকা যাবে না। কিন্তু অনৈতিকভাবে তিনি বলপ্রয়োগ করে ভোট কেন্দ্রেই আমাদের প্রবেশ করতে বাঁধা দেন। পুরো ঘটনার ভিডিও আমাদের সংগ্রহে রয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্থ করায় আমি এই প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতনদের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
এবিষয়ে পিংরাইল কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার মিজানুর আহসান চৌধুরী বলেন, ‘যা করেছি বুঝেই করেছি। আমাদের প্রশিক্ষণে বলা হয়েছে একজন সাংবাদিক ১০ মিনিট কেন্দ্রে থাকতে পারবে। ওনি ১০ মিনিটের বেশি ছিলো, উনাকে চলে যেতে বলার পর উনি গেটের বাইরে গিয়ে আবার আসতে চাইছিলেন।’
কোথায় প্রশিক্ষণে সাংবাদিকদের ১০ মিনিট ভোট কেন্দ্রে থাকার নিয়মের কথা বলা হয়েছে, নাকি সেটা ভোটকক্ষের বিষয়ে বলা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনার আরো কথা থাকলে আপনি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেন।’
এ বিষয়ে লৌহজং ও টংগিবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আশরাফুল আলম বলেন, ‘গনমাধ্যমকর্মীদের কার্ড দেওয়া হয়েছে কাজ করার জন্য। তারা কেন্দ্রে যেকোন সময় প্রবেশ করতে পারবে। ওই প্রিজাইডিং অফিসারের এমন কার্যক্রমের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’