কৃষকের মাঠ স্কুল। এলাকার গরিব ও ক্ষুদ্র দিনমজুর চাষিরা এই স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বেশিরভাগই নিরক্ষর। শিক্ষা উপকরণ হিসেবে এখানে খাতা, কলম, বই কিংবা কাঠ পেন্সিল ব্যবহার করা হয় না। এখানে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। পরিচয় করানো হয় উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাতের সঙ্গে। গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মতভাবে হাঁস-মুুরগি, গাভী, ছাগল পালন, ধানখেতে মাছ চাষ করে বাড়তি আয়ের পথও দেখানো হয় এ স্কুলে।
পাঁচ মাসব্যাপী ২৫টি পরিবারের সদস্যদের হাতে-কলমে কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়েও শেখানো হয়। সকালে মাঠে বা গৃহস্থালির কাজ শেষে বিকেলে স্কুলে আসেন কৃষকরা। পরিবারের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃৃষক মাঠ স্কুল থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের কৃষাণ-কৃষাণিরা। এই মাঠ স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে উপজেলার অনেক কৃষক এখন স্বাবলম্বী করেছে।
আর এই কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষাণ-কৃষাণিরা কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ প্রয়োগ করছেন মাঠে। যা গতি আনছে দারিদ্র্যমোচনে ও বদলাচ্ছে দিন। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষক। তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার আরো অনেক কৃষক। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মিরপুর উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক হারেজ আলী জানান, আমি এই কৃষকের স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। এর ফলে আমি কীভাবে আমার কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারব সে সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
এছাড়া এই স্কুল থেকে আমি কীভাবে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ভালো ফসল উৎপাদন ও কীটনাশক ব্যবহার না করে কীভাবে ফসলকে রোগবালাই ও পোকামাকড় দূর করা যায় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আসমা খাতুন জানান, আমি এই কৃষক মাঠ স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। এ স্কুল থেকে আমি পারিবারিকভাবে কীভাবে খামার করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায় তা জানতে পেরেছি। আমি এখান থেকে হাঁস-মুরগি, ছাগল, ভেড়া ও গবাদিপশু পালন সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
এ ব্যাপারে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কৃষক মাঠ স্কুলে (আইএফএমসি) শেখানো হয় কৃষিতে বিজ্ঞানভিত্তিক পন্থায় ধান-সবজিসহ সব ধরনের আবাদের কলাকৌশল। এখানে যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা সবাই কৃষক-কৃষাণি।
তিনি জানান, এই স্কুল থেকে মাঠ ফসল (ধান), বসতবাড়ি বাগান (সবজি ও ফল), গরু, ছাগল, মুরগি-হাঁস, পুষ্টি, মাছ, কৃষক সংগঠন ও সামাজিক বিষয়সমূহের ওপর পাঁচ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ২৫টি পরিবারের মাঝে সনদপত্র, আয়বর্ধনের জন্য দেড় হাজার টাকা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিংকর চন্দ্র দাস জানান, প্রতিটি স্কুলে কারিগরি সেশন, সমন্বিত কৃষি ও সামাজিক সেশন, সমস্যাভিত্তিক কৃষি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা, কৃষিকে কীভাবে শক্তিশালী, গতিশীল ও টেকসই করা যায় তা মাঠে গিয়ে শেখানো হয়। যাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই নতুনদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। এতে আমাদের কৃষির আরো উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।