২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বৃহস্পতিবার | রাত ৪:৫৯
কাপড় ভাজ করে আয় লাখ টাকা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ৯ এপ্রিল ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে জর্জেট কাপড় ভাজ করে এই শ্রমিকরা আয় করছেন ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। তাই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় এলাকার বেকার তরুণ- যুবকরা যুক্ত হচ্ছেন এই পেশায়।

পাশাপাশি, এই পেশার উদ্যোক্তারাও ঈদ মৌসুমে ৩ থেকে ৪ মাসে আয় করছেন দশ থেকে বিশ লাখ টাকা।

ব্যতিক্রমি এই পেশার দেখা মিলেছে মুন্সিগঞ্জ সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নের ভট্টাচার্যের বাগসহ আশপাশের এলাকায়।

সম্প্রতি সরেজমিন ওই এলাকার কুচিকাজের কারখানাগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, দুই পাশ থেকে চেপে কাপড় ভাজ করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। দিনে-রাতে তাদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। যে যত বেশি কাপড় ভাজ করতে পারবেন তার আয়ও বেশি। তাই শ্রমিকদের মধ্যে কোন বিশ্রামের তাগাদা নেই। টানা ১২ থেকে ১৫ ঘন্টা কাজও করছেন কেউ কেউ।

এসময় দেখা যায়, জর্জেট কাপড়ের পিসগুলোকে ছোট ছোট কাঠের বেঞ্চে ছড়িয়ে দিয়ে একের পর এক বাঁশের চিকন বেত দিয়ে ভাজে ফেলছেন শ্রমিকরা। কাপড়ে ভাজ আনার পর উপরে ভারি লোহা দিয়ে চেপে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে ঢুকানো হচ্ছে উত্তপ্ত গরম পানির ড্রামে। জর্জেট কাপড়ের উপর ভাজগুলো যাতে আরও দীর্ঘস্থায়ী হয় সেজন্যই এই পদ্ধতি। গরম পানির ড্রাম থেকে ভাপা দিয়ে বের করার পর কাপড়গুলো ঠান্ডা করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন গার্মেন্টসে।

এই কাজের উদ্যোক্তা শহিদুল ঢালী জানান, ‘ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা থেকে বস্তাভর্তি জর্জেট কাপড় নিয়ে আসেন তারা। এরপর সেগুলো স্থানীয় বাসা-বাড়ির গৃহিণীদের দিয়ে প্রথম ধাপে সাইজ অনুযায়ী কেটে প্রস্তুত করা হয়। সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় কারখানায়। সেখানে প্রতি পিস কাপড়ের পিছনে কাজ করেন দুইজন শ্রমিক। তারাই জর্জেট কাপড়গুলো চেপে ধরে কুচি বসানোর কাজটি করেন। এরপর সেগুলো চলে যায় গার্মেন্টসে। সেখানে এসব কুচি দেয়া কাপড় বসানো হয় শিশু ও নারীদের বিভিন্ন ডিজাইনের জামার নিচে।’

তিনি জানান, ‘পুথিগত কোন নাম না থাকলেও স্থানীয়রা একে কুচির কাজ বলে থাকেন।’

কুচির কাজের শ্রমিক ইয়াসিন ঢালী জানান, ‘সারাবছরই এই কাজ থাকে। তবে, ঈদের সময় ৩-৪ মাস কাজের প্রচণ্ড চাপ থাকে। এসময় একেকজন শ্রমিক এক থেকে দেড়-দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।’

আরেক শ্রমিক রবি চান বলেন, ‘ডজন হিসাবে পারিশ্রমিক দেয়া হয়। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকাও আয় করেন কেউ কেউ। একেকটি কাপড়ের পিছনে কাজ করেন দুইজন করে শ্রমিক।’

শ্রমিক আসলাম ঢালী বলেন, ‘আমরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকি এই কাজের জন্য। বছরের অন্য সময় বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও ঈদের সময় কুচি কাজ করে ভালো আয় হয় আমাদের। এ দিয়েই ৬-৭ মাস ভালোভাবে সংসার চলে যায়।’

জানা যায়, বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ সদরের বিভিন্ন এলাকাতে কুচি কাজের ১০ থেকে ২০ টি কারখানা রয়েছে। প্রকারভেদে ঈদ মৌসুমে প্রতিটি কারখানার আয় ২০-৩০ লাখ টাকা।

error: দুঃখিত!