মুন্সিগঞ্জ, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
১০ বছর পর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ। সকাল ১০ টা’য় গজারিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো সম্মেলনস্থল।
তবে, সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে স্নায়ু উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্মেলনের একাধিক কাউন্সিলর, আয়োজক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
সম্মেলনে ১৫-২০ হাজার লোকের সমাগম হতে পারে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। তাই যে কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। সদর-গজারিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে অতিথির তালিকা নিয়েও দেখা গেছে নানামুখী বিরোধ। জানা গেছে, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরার। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের। অন্যদিকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনার। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের।
সম্মেলনের অতিথিদের মধ্যে সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মৃণাল কান্তি দাস ছাড়া বাকি সবাই সভাপতি প্রার্থী আমিরুল ইসলামের পক্ষে কাজ করতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে আরেক সভাপতি প্রার্থী রেফায়েত উল্লাহ খান তোতার সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনে আমিরুল ইসলামের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছিলেন তোতা। এরপর থেকেই তার লক্ষ্য ছিলো উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার। কিন্তু আমিরুল ইসলাম এই শীর্ষ পদের ব্যাপারে কোনরকম ছাড় দিতে না চাওয়ায় এখানে তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। সম্মেলনের দিন ঘনিয়ে আসায় তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
গজারিয়া থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী জানান, সংঘাতের কোন আশঙ্কা প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে না। তবে যেহেতু একটা জায়গায় অনেক লোক সমাগম হবে তাই যাতে সম্মেলনটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্যে আমাদের বাড়তি নজরদারি থাকবে। নদীতে নৌ পুলিশের টহল থাকবে। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। সম্মেলন ঘিরে ইতিমধ্যেই আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে সভাপতি প্রার্থী রেফায়েত উল্লাহ খান তোতার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরেক সভাপতি প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বলেন, সম্মেলন ঘিরে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনাকাঙ্খিত কিছু হবে বলে আশঙ্কা করি না। তবে কিছু লোকের একটা সুন্দর জিনিস নষ্ট করার চেষ্টা সবসময়ই থাকে। আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে হাইকমান্ডকেও জানাবো। আমরা সুন্দর ও সফলভাবে সম্মেলন শেষ করার চেষ্টা করছি।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন, আমি আশা করি শান্তিপূর্ণ অবস্থাই থাকবে। পুলিশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সেটি ভালো- যাতে কোন সংঘর্ষ, সংঘাত না হয়।
সবার নজর সভাপতি পদে
সম্মেলনে সভাপতি পদে দুই শীর্ষ প্রার্থী আমিরুল ইসলাম ও রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের সমর্থনে একই পদে প্রার্থী হওয়ায় তাদের নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। এই দুই নেতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত কে সভাপতি হচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে।
আবার আমিরুল ইসলাম সভাপতি হলে রেফায়েত উল্লাহ খান তোতাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বা অন্য কোন শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হবে কি না, নাকি তাকে বাদ দিয়েই হবে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে।
তবে, স্থানীয় নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেষ মুহুর্তে তোতা ও আমিরুল দুইজনই উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে আসতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাবেন। সে লক্ষ্যে তারা নিজেদের পক্ষ থেকে সবরকমের রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করবেন। প্রয়োজনে পেশিশক্তিও প্রয়োগ করতে পারেন তারা। কেউই কাউকে কোনরকমের ছাড় দেবেন না বলে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন।
সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের অনুসারি হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে আরেক সভাপতি প্রার্থী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মৃণাল কান্তি দাসের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সম্মেলনে সভাপতি পদে আরও আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মহসীন চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. মাজহারুল হক তপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ।
যদি কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে তাহলে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ৩৩৪ জন কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে জানা গেছে।