মুন্সিগঞ্জ, ১৪ অক্টোবর, ২০২২, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
আওয়ামী লীগের যুব অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার নতুন কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে জেলার সর্বত্র আলোচনা চলছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। একাধিক প্রার্থী, সাধারণ নেতাকর্মীসহ বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, যুবলীগকে ঢেলে সাজাতে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের ব্যাক্তি কে সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া উচিৎ।
জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০০৪ সালে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ভাতিজা আক্তারুজ্জামান রাজিবকে সভাপতি ও মো. ফেরদৌস আলম খানকে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। ২০০৫ সালে হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর ২০১৯ সালে বিভিন্ন অভিযোগে কমিটি থেকে আক্তারুজ্জামান রাজিব কে বহিস্কার করে শাহজাহান খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকে জেলায় কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে যুবলীগের কর্মকান্ড।
এরপর গত ৮ সেপ্টেম্বর তারিখ কেন্দ্রীয় যুবলীগের বর্তমান কমিটি মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহবান করেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখ পর্যন্ত জেলা যুবলীগের সভাপতি পদের জন্য ৭ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ১৯ জন প্রার্থী জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
সম্মেলনেই হবে নতুন কমিটি
মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের পরবর্তী কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে হবে না কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। তবে জেলা ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্মেলনের মাধ্যমেই মুন্সিগঞ্জে যুবলীগের পরবর্তী কমিটি গঠন করা হবে। এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফেরদৌস আলম খান জানান, নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী একাধিক ব্যক্তি জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এখন সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। অনেকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া মদখোর, জুয়াবাজ, টেন্ডারবাজ, অস্ত্রবাজ ও নারী কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত কেউ যাতে কমিটিতে না আসতে পারে সে বিষয়েও কেন্দ্র সতর্ক রয়েছে। কেন্দ্র থেকে আমাকে জানানো হয়েছে সম্মেলন করে কমিটি ঘোষণা করা হবে মুন্সিগঞ্জে।
প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের বিপরীতে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ফয়সাল মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল। এছাড়া একই পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন। ছাত্রলীগের চলমান কমিটিতে থেকে যুবলীগের প্রার্থী হওয়ায় এ নিয়েও সর্বত্র আলোচনা চলছে।
আলোচনায় সাবেক ছাত্রনেতারা
জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যাারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। বর্তমান ছাত্রলীগ কমিটির ৩ জনও প্রার্থী হয়েছেন। সেই হিসেবে দেখা যাচ্ছে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকেই উঠে আসতে যাচ্ছে মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের পরবর্তী নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা জানান, মুন্সিগঞ্জ থেকে জেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হতে ৭ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ১৯ জন প্রার্থী তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
সভাপতি পদে প্রার্থীরা হলেন- জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম মাওলা তপন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জি এম মনসুর। এছাড়া সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন, জেলা যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি আক্তারুজ্জামান রাজিবের ছোট ভাই জালালউদ্দিন রুমি রাজন। এছাড়াও সিরাজদিখান উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শেখ মনির হোসেন মিলন ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক শ্রীনগর উপজেলার রাঢীখাল ইউনিয়নের টুটুল মোহাম্মদ সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এই পদে আরও প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান সুমন। তবে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীরা হলেন- শ্রীনগর উপজেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা ফিরোজ আল মামুন ও বর্তমান জেলা কমিটির সহ জনশক্তি ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান সবুজ (শ্রীনগর)। লৌহজং উপজেলা থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মো. মর্তুজা খান। সিরাজদিখান থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের বর্তমান আহবায়ক, সাবেক ছাত্রনেতা মঈনুল হাসান নাহিদ। এই উপজেলা থেকে আরও প্রার্থী হয়েছেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আনিসুর রহমান রিয়াদ। গজারিয়া উপজেলা থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নেকী, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রভাষক এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আজিজুল হক পার্থ, টংগিবাড়ী থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহ্ আলম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জামালউদ্দিন। গজারিয়া থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মহসিন আহম্মেদ। এছাড়াও প্রার্থী হয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, মুন্সিগঞ্জ সদর থেকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি বাবুল হোসেন এবং জেলা ছাত্রলীগের আরেক সাবেক সহ সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এছাড়াও লৌহজং উপজেলা থেকে জেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সলিমুল্লাহ খান সেন্টু ও আশরাফুল ইসলাম মুরাদ এবং গজারিয়ার হোসেন্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান সবুজ বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করা এই মুহুর্তে কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে স্বচ্ছ ও সুন্দর কমিটি হবে। তিনি বলেন, বিতর্কিত লোকজন কমিটিতে আসতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. মর্তুজা খান বলেন, কেন্দ্র চাইলে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দিতে পারে আবার তারা চাইলে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করতে পারে। এটা তাদের বিষয়। তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, স্বচ্ছ ও কর্মীবান্ধব নেতাদের যাতে তারা মূল্যায়ন করে।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফেরদৌস আলম খান বলেন, বিতর্কিত ও বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের দায়িত্বে আসছেন না এটা শতভাগ নিশ্চিত। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এসব বিষয়ে আরও সতর্ক। তারা জানিয়েছেন, যারা জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তাদের নিয়ে শীঘ্রই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।