১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | বিকাল ৫:১৪
কাজ শেষ প্রান্তে, পদ্মাসেতুতে রেল চলবে ৩০ মার্চ
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ২৮ মার্চ ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

পদ্মাসেতুর নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণের কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। কাজের অগ্রগতি ৯৯ ভাগ। আগামী ৩০ মার্চ পরীক্ষামূলকভাবে সেতুতে ট্রেন চলবে বলে প্রকৌশল সূত্র জানিয়েছে। এদিন মাওয়া রেল স্টেশন থেকে ট্রেন যাবে ভাঙা রেল স্টেশনে। ভাঙা অংশের কাজ আগেই শেষ হয়েছে।

৩০ মার্চ পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল কার্যক্রম পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে রেলমন্ত্রী নুুরুল ইসলাম সুজনের। সবকিছু ঠিক থাকলে এদিন প্রথমবারের মত রেলে চড়ে পদ্মা সেতু পার হওয়ার কথা রয়েছে রেলমন্ত্রীর।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, পদ্মা সেতুর নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণের কাজের অগ্রগতি ৯৯ ভাগ। বাকি আছে মাত্র একটি স্লিপার বসানোর কাজ। ৭ মিটার দৈর্ঘ্যের ইস্পাতের স্লিপারটি বসলেই শেষ হবে শতভাগ কাজ।

তিনি আরও জানান, সোমবার বিকালে চীন থেকে উড়োজাহাজে করে স্লিপারটি বাংলাদেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। প্রকল্প এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই ১৫ টন ওজনের স্লিপারটি মাওয়া প্রান্তের রেল স্টেশন থেকে ট্র্যাক কারে করে নিয়ে যাওয়া হবে সেতুর মাঝামাঝি ৫ নম্বর মুভমেন্ট জয়েন্টে। আজ মঙ্গলবারের মধ্যেই এটি বসে যেতে পারে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের। স্লিপার বসে গেলে কিউরিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৭২ ঘন্টা। এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে শতভাগ কাজ।

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ রেলব্রিজ মুভমেন্ট জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে পদ্মার রেলসেতুতে। এতে দ্রুতগতির রেল চলাচলের সময় এ জয়েন্টে রেললাইন ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারবে। আর সেতুতে আটটির মধ্য সাতটি জয়েন্টই বসে গেছে। পদ্মা রেলসেতু ৭ খণ্ডে বিভক্ত। আর সেতু টেকসই রাখতে নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে বিভাজন রাখা হয়েছে। তাই মূল সেতুর সঙ্গে দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের সংযোগ এবং মাঝে জয়েন্ট আছে ছয়টি। কংক্রিটের পাথরবিহীন রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত করতে এ জয়েন্টগুলো স্টিল দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি। চারটি ধাপে ছয় বেয়ারিং প্লেট ছাড়াও সাতটি প্লেটের ওপর স্থাপিত শক্তিশালী এ মুভমেন্ট জয়েন্ট। ব্যতিক্রমী একেকটি জয়েন্টের ওজন প্রায় ১৫ টন। সেতুর মাঝামাঝি ৫ নম্বর মুভমেন্ট জয়েন্টের বাকি থাকা ইস্পাতের স্লিপারটি বসানো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। আর মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের ৮টি স্লিপার ছাড়া বাকি সবগুলো কংক্রিটের তৈরি। এগুলো ফরিদপুরের ভাঙ্গা পুরোনো রেলস্টেশনের পাশে স্থাপিত কারখানায় তৈরি করেছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন তৈরির জন্য সব স্লিপার একই কারখানায় তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষ তাপমাত্রায় মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের স্লিপারগুলো তৈরি করে আনা হয়েছে চীন থেকে।

প্রসঙ্গত, রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেতুতে যানবাহন চালু রেখেই নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। এখন তা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে।

অন্যদিকে, পদ্মা সেতু ছাড়াও প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের স্টেশন নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিএসসি তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ।

error: দুঃখিত!