মুন্সিগঞ্জ, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের টানা দুইবারের সংসদ সদস্য এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেশায় আইনজীবি মৃণাল কান্তি দাসের ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় গত দুইবারের তুলনায় বেড়েছে। অন্যদিকে সম্পদ বেড়েছে তার স্ত্রীর।
দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৃণাল কান্তি দাস প্রদত্ত হলফনামা বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মৃণাল কান্তি দাসের দাখিলকৃত হলফনামায় দেখা গেছে- ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে ব্যবসা থেকে ৯ লাখ ৬ হাজার ২৫০ টাকা আয় করতেন তিনি। ২০১৮ সালে ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ২ লাখ টাকা বেড়ে হয় ১১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২০১৪ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার সময় তার স্ত্রীর ব্যবসা থেকে কোন আয় না থাকলেও ২০১৮ সালের হলফনামায় বাৎসরিক আয় বলা হচ্ছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের হলফনামায় যা বলা হচ্ছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৬০ টাকা।
২০২৩ সালে মৃণাল কান্তি দাসের ব্যবসা থেকে আয় ১৩ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৭ টাকা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি কি ব্যবসা করেন বা কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তা উল্লেখ নেই হলফনামাতে।
২০১৪ সালে মৃণাল কান্তি দাসের হাতে নগদ টাকা ছিলো ১২ লাখ আর ২০১৮-তে ১৫ লাখ ও স্ত্রীর কাছে ৪০ হাজার। ২০২৩ সালে তার কাছে নগদ রয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫ টাকা।
২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোন টাকা ছিলো না। তবে ২০১৮-তে নিজ অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৬২ হাজার ১৪ ও স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ছিলো বলে হলফনামায় বলা হয়েছে। ২০২৩ সালে এসে হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী তার অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯১ টাকা।
২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্রে মৃণাল কান্তি দাসের বিনিয়োগ ছিলো ৩ লাখ ১২’শ ৭১ টাকা। আর ১৮ সালে বিনিয়োগ ৩ লাখ ২০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬ টাকা। আর ২০২৩ সালে সঞ্চয়পত্রে মৃণাল কান্তি দাসের বিনিয়োগ না থাকলেও স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ রয়েছে ৯০ লাখ ২৪ হাজার ১৯১ টাকা।
২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে ধানমন্ডিতে ১৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট ছিলো তার। ১৮ সালেও তিনি ওই ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করলেও ২০২৩ সালের হলফনামায় দেখা গেছে মৃণাল কান্তি দাস পূর্বাচলে ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মূল্যের ৭ দশমিক ৫ কাঠা প্লটের মালিক হয়েছেন ও তার স্ত্রী মোহাম্মদপুরে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ দশমিক ৫ কাঠা প্লটের মালিক হয়েছেন। তাছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তার স্ত্রী ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি দালান নির্মাণ করছেন।
উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন: ২০১৪-২০২৩
মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নের ৪ লাখ ৮২ হাজার ২৯৪ জনভোটার নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ ৩ আসন। এই আসনে টানা দুইবারের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস। তার আমলে উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছে এই এলাকায়।
সেগুলো হলো- ২ হাজার দুইশো ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত দ্বিতল সড়ক নির্মাণ ও সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প গ্রহণ, মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যায়ে ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণ, মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ, সদর ও গজারিয়াতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ, ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে সদরের পেট্টোলপাম্প এলাকা থেকে মানিকপুর পর্যন্ত সড়ক আরসিসি করণ, সদরে ১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়াম আধুনিকীকরণ, পোষ্ট অফিসের নতুন ভবন নির্মাণ, চরাঞ্চলের সড়ক প্রশস্তকরণ-স্টিলের সেতুর বদলে কংক্রিটের সেতু নির্মাণ, সদরের বসারচর সেতু নির্মাণ, মুন্সিগঞ্জ মহিলা কলেজের ভবন নির্মাণ, প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে হরগঙ্গা কলেজে নতুন ভবন, ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন ভবন নির্মাণ, জেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস নির্মাণ, মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নতুন ভবন নির্মাণ, মুন্সিগঞ্জ গজারিয়া ফেরি সার্ভিস চালুকরণ, মুন্সিগঞ্জ জেলা আদালত ভবন নির্মাণ, গজারিয়া ও মুন্সিগঞ্জে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ, জেলা খাদ্য ভবন নির্মাণ, ৮০ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৭ কিলোমিটার গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়ক নির্মাণ, গজারিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ, সদরে ৫২টি প্রাইমারি স্কুলের ভবন নির্মাণ।