১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ৯:৩৭
মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বেদে সম্পদায়ের ‘আলোকিত শিশু স্কুল’
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১ ডিসেম্বর, ২০২০, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের নগর ফুরসাইল কুমড়াখালির চর। এই চরে ভাসমান অবস্থায় ও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে প্রায় ১২০০ বেদে পরিবারের ৩০ বৎসর যাবৎ বসবাস।

ধলেশ্বরী নদীর শাখা নদীর পাশে ৪ শতাংশ জমির উপর নির্মিত ‘আলোকিত শিশু স্কুল’। ছবি: আমার বিক্রমপুর

এখানে বসবাসরত বেদে সম্প্রদায়ের অনগ্রসর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ২০১৫ সাল থেকে কাজ করছে ‘আলোকিত শিশু স্কুল’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন। প্রথম দিকে তারা ভাসমান নৌকায় স্থানীয় শিশুদের ক্লাস করাতো। পরে ২০১৯ সালে বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় ৪ শতাংশ জমির উপর একটি স্কুলঘড় নির্মাণ করে দেয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

ধলেশ্বরী নদীর শাখা নদীর পাশে ৪ শতাংশ জমির উপর নির্মিত ‘আলোকিত শিশু স্কুল’। ছবি: আমার বিক্রমপুর

এরপর ধীরে ধীরে এই স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। শিক্ষার্থীদের সকলেই স্থানীয় বেদে পল্লীর। অনেক শিশু এই স্কুল থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করে বর্তমানে স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদরাসায় পড়ছেন।

সুবর্ণা ও শারমিন ‘আলোকিত শিশু স্কুল’ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বর্তমানে স্থানীয় একটি দাখিল মাদরাসায় পড়ছেন। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

‘আলোকিত শিশু স্কুল’ এর তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসান জানায়, তার পিতা সুমন নদীতে মাছ ধরে। তার অল্প আয়। তাছাড়া তাদের স্থানীয় কোন আইডিন্টিটি নেই। যার কারনে স্থানীয় স্কুলে সে ভর্তি হতে পারেনি। তবে ‘আলোকিত শিশু স্কুল’ এ শিক্ষা নিতে তার কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি।

আশেপাশের বেদে সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন নৌকা পাড় হয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন। ছবি: আমার বিক্রমপুর

‘আলোকিত শিশু স্কুল’ এর শিক্ষক পারভেজ হাসান জানান, এখানে প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাদান করা হয়। বর্তমানে স্কুলটিতে ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলটি চরের মাঝখানে হওয়ায় নদী পার হয়ে শিশুদের স্কুলে আসতে হয়। তারা একধরনের ঝুকির মধ্যে থাকে। তবে তাদের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ প্রবল।

তিনি জানান, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন এর ব্যবস্থা থাকলেও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। খাবার পানি আনতে হয় অনেক দূর থেকে।

‘আলোকিত শিশু স্কুল’ এর শিক্ষার্থীরা গাছের চারা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। এই গাছ তারা কার জমিতে লাগাবেন তা নিয়েও নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করছিলেন। ছবি: আমার বিক্রমপুর

পারভেজ হাসান জানান, স্কুলটি চরের মাঝখানে হওয়ায় এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। গরমের সময় ফ্যানের অভাবে ছোট শিশুদের খুব কষ্ট হয়। আর শিক্ষকরাও কষ্ট করে ক্লাস করান।

স্কুলের পাশেই ভাসমান নৌকায় বসবাস বেদে সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের। ছবি: আমার বিক্রমপুর।

‘আলোকিত শিশু স্কুল’ এর প্রতিষ্ঠাতা মিঠুন দাস কাব্য ‘আমার বিক্রমপুর’ কে বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের মধ্যে তাদের প্রাপ্য শিক্ষার সুবিধাটুকু পৌছে দিতেই এই স্কুলের প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে স্কুলটিতে যে সকল সংকট রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য সরাসরি সার্টিফিকেট ও বইয়ের ব্যবস্থা করা। বর্তমানে আমাদের বই কিনে নিতে হচ্ছে। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন সহায়তা করলে ভবিষৎয়ে বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের শিক্ষালাভ আরও সহজ হবে।

তিনি বলেন, স্কুলটিকে বর্তমান জায়গা থেকে সরিয়ে কোন স্থায়ী জায়গায় নির্মাণ করা গেলে বাকি সকল সুযোগ-সুবিধাও এই স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা ভোগ করতে পারবে। এজন্য বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগ দরকার।

error: দুঃখিত!