মুন্সিগঞ্জ, ২৯ মার্চ, ২০২২, তানজিল হাসান (আমার বিক্রমপুর) :
মুন্সিগঞ্জে এবার আলুর ফলন অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষিবিদরা। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে প্রথম দফায় লাগানো মোট কৃষিজমির ৪০ ভাগ বীজ নষ্ট হয়ে যায়।
পরবর্তীতে আলু চাষের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫-২০ দিন দেরিতে চাষ করায় আবহাওয়া জনিত কারণে ফলন কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষক, কৃষিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। আর ফলন কম হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। এতে করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করতে পারছেন না।
মুন্সিগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে প্রথম দফায় আলু চাষ শুরু করেন কৃষকরা। আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর কৃষিজমি যা মুন্সিগঞ্জের মোট কৃষিজমির অর্ধেকেরও বেশি। তবে, প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলু বীজ রোপন করার পর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। নষ্ট হয় সদ্য বীজ বোনা আলু ক্ষেত। ১৫-২০ দিন বিরতি দিয়ে পুনরায় বীজ বপন করে কৃষক।
তবে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আবার, অসময়ের বৃষ্টিপাত, নিম্নমানের আলুবীজ ও ঋতু পরিবর্তনের ফলে শীত চলে যাওয়ার কারণে আলুর ফলন খুবই কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন সবাই।
মুন্সিগঞ্জ সদরের মহাকালীতে নিজের আড়াই একর জমিতে তিন লাখ টাকা খরচ করে আলু চাষ করেছেন মাসুদুর রহমান। তিনি জানান, ‘প্রথম দফায় আমার ৫০ ভাগ জমিতে আলু বীজ বপন করার পর বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়ে গেলো। এতে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হই। পুনরায় ২০ দিন পর আবার আলু বীজ বপন করি। আমার কাছে অবশ্য অতিরিক্ত বীজ ছিলো তাই অন্য চাষীদের মত আড়াইগুন দামে নতুন করে নিম্নমানের বীজ কিনতে হয়নি। ছয়শ’ টাকা বস্তা বীজের দাম হয়েছিল
১৪-১৫শ’ টাকা। অন্যান্য বছর আরও আগে জমি থেকে নতুন আলু তোলা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু, এ বছর দেরিতে চাষ করতে বাধ্য হওয়ায় ফলন দেরিতে উঠছে। আমার জমিতে আলু উঠবে আরও ৪-৫ দিন পর। তবে, আশঙ্কা করছি গরম পড়ে যাওয়ায় আলুর ফলন অনেক কমে যাবে।’
মুন্সিগঞ্জের সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের কৃষক জুয়েল জানান, ‘আমি ২৪ কড়া (৬ গন্ডা) জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রথম দফায় এক বাক্স বীজসহ ৮ বস্তা বীজ আলু লেগেছিলো। বৃষ্টিতে সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ১৪শ’ টাকা বস্তা দরে বীজ কিনে আবার আলু চাষ করি। প্রায় আড়াই মাস হলো চাষ করেছি। এবার ক্ষেতে রোগের কারণে বেশিরভাগ আলু গাছ জ্বলে গেছে। বেশি করে ওষুধ দিয়েছি। এতে খরচও বেড়েছে। তবে, ফলন ভালো হবেনা। গত বছর এই পরিমাণ জমিতে ১৩৩ বস্তা আলু হয়েছিলো। এবার আলুর পরিমাণও কম হবে এবং মানও ভালো হবেনা।’
কামরুল হাসান রাসেল নামের আরেক কৃষকও জানালেন আলুর ফলন কম হওয়ার আশঙ্কার কথা। তিনি বলেন, ‘নাভীধ্বসা রোগে আক্রান্ত হয়েছে আমাদের ক্ষেত। এতে করে ফলন কম হবে, আবার মানও ভালো হবেনা। আমি ১৬ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। এবার মৌসুমটা প্রায় এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় রোগব্যাধির জন্য ওষুধও বেশি দিতে হচ্ছে। এতে খরচও বেড়ে গেছে। গতবার ৬ হাজার মন আলু পেয়েছিলাম এই পরিমাণ জমি থেকে। কিন্তু, এ বছর আবহাওয়া ও রোগের কারণে এত ফলন হবেনা। তাই দাম ভালো থাকলেও এ বছর আলুতে কৃষকের খরচ উঠবে না।’
মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খুরশীদ আলম জানান, জাওয়াদের প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছিলো তাতে ১১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আলুর আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্থ এসব জমিসহ ৩৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দুই হাজার হেক্টর কম জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। তবে বীজ ভালো না থাকা ও দেরিতে বপন করায় এবার ফলন কম হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছত্রাকের আক্রমণসহ নাভীধ্বসা রোগ সব সময়ই কমবেশি হয়ে থাকে। এ বছরও সেটা কিছুটা হয়েছে। তবে তা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি নয়। কিন্তু, ফলন কম হওয়ার মূল কারণ আবহাওয়া। আলুর ভালো ফলনের জন্য শীত দরকার। কিন্তু, এবার দেরিতে বীজ বপন করায় আলু গাছ শীতের আবহাওয়াটা পায়নি।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আলুচাষীদের জন্য সরকারি কোনো প্রণোদনা বা ভর্তূকির ব্যবস্থা নেই।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আলুকে প্রধান ফসল হিসেবে ধরা হয়না। সে কারণে এসব ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়না। কিন্তু, ভবিষ্যতে যদি সরকার এসব ক্ষেত্রে কোন সহায়তা দেয় তবে তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।