মুন্সিগঞ্জ, ৮ নভেম্বর, ২০২২, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
একাধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বাল্য বিয়ে পড়ানোর ঘটনায় আলোচিত মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার বেতকা ইউনিয়নের কাজি ইলিয়াস আবারো বাল্য বিবাহ পড়াবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) তিনি টংগিবাড়ী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে এ মুচলেকা দেন।
এর আগেও ২০১৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে পড়ানোর সময় বেতকা ইউনিয়ন কাজি অফিস থেকে বড় কনেসহ তাকে আটক করে পুলিশ। সে সময় সে এ ধরনের কাজ আর করবেনা বরে মুচলেকা দিয়ে এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রেহাই পায়।
সম্প্রতি অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই ১৪ বছরের কিশোরীকে বিয়ে পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে এই কাজির বিরুদ্ধে। অভিভাবকের উপস্থিতি ছাড়াই বেতকা ইউনিয়নের স্থানীয় মাদ্রাসার ১০ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে গেল ১৩ই সেপ্টেম্বর তারিখে বিয়ে পড়ান এই ইলিয়াস। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ইউনিয়নটিতে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। একই গ্রামের তাবু মাদবরের ছেলে প্রবাসী সিয়াম মাদবর এর সাথে এই বিয়ে পড়ান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে এই বিয়ে সম্পন্ন করেন কাজী। এ নিয়ে ওই কিশোরীর পিতা মুন্সিগঞ্জ জেলা রেজিস্টার অফিস ও টংগিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথক অভিযোগ দায়ের করলে আজ মঙ্গলবার সকালে টংগিবাড়ী মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে হাজির হয়ে আর বাল্য বিবাহ পড়াবেনা বলে ফের মুচলেকা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কিশোরীর পিতা বলেন, আমার মেয়ে ২০০৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করে। আমার মেয়ের বিয়ের বয়স না হওয়া সত্বেও বেতকা ইউনয়নের কাজী ইলিয়াস তাকে বিয়ে পড়ান।
জেলা কাজী সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন বলেন, বিদেশে ছেলে থাকলে দুই পক্ষের ২ জন উকিল এবং ২ উকিলের পক্ষে ৪ জন স্বাক্ষী নিয়োগ করে টেলিফোনে বিয়ে পড়ানো যায়। কিন্তু এই কাবিনটিতে মাত্র একজন উকিল নিযুক্ত করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে যা আইন অনুযায়ী বৈধ নয়। আমি কাজী সাহেবকে বিষয়টি বলছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাজী ইলিয়াস বলেন, ওই মেয়ের বিয়ের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আশায় আমি বিয়ে পড়াইছি। তবে মেয়ে পক্ষের লোকজন কম থাকায় সে সময় সকল সাক্ষী নিতে পারি নাই। পরে এসে সাক্ষী দিয়ে যাবে বলেছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীকে বিয়ে পড়ানোটা তার ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসলে সকল কাজিরাই পড়ায়।
টংগিবাড়ী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শামীম আরা বলেন, কাজি ইলিয়াস সকালে অফিসে এসে মুচলেকা দিয়ে গেছেন। তিনি আর কখনো এ ধরনের কাজ করবেন না।
জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের প্রধান সহকারী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কিশোরীর পিতার করা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে আমরা দুই পক্ষকে নোটিশ করেছি। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।