মুন্সিগঞ্জ, ৬ জুলাই ২০২৩, নিজস্ব প্রতিবেদক (আমার বিক্রমপুর)
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, আদালত প্রাঙ্গণের সিন্ডিকেট ভাঙতে ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিচারপ্রার্থীরা যাতে স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার পান সেজন্য বিচারক ও আইনজীবীদের একত্রে কাজ করতে হবে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ১৭৮ বছরপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল ৩টায় জেলা আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য ‘ন্যায়কুঞ্জ’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ও সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন প্রধান বিচারপতি।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বিচার প্রশাসনের দায়িত্বশীল অংশীদার। মানুষের কল্যাণে আইনজীবীদের ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আইনজীবীদের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সামনে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আইনজীবীদের নামসহ একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হবে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, মামলার জট বিচারব্যবস্থার অন্তরায়। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিচারক ও আইনজীবীদের সহযোগিতা দরকার। পুরাতন মামলা নিষ্পত্তিতে আইনজীবীরা সহযোগিতা করবেন। বিচার ব্যবস্থার মেরুদণ্ড জেলা আদালত। বিচারক ও আইনজীবীদের সন্ন্যাসীদের মতো সাধনা ও ঘোড়ার মতো দ্রুততর হতে হবে। বিচার কাজে ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিতে হবে। এছাড়াও দরকার বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করা। বিচার বিভাগ ফেল করলে গণতন্ত্র ফেল করবে। আর গণতন্ত্র ফেল করলে রাষ্ট্র ফেল করবে। অতএব, এটা আমরা হতে দিতে পারি না। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো, যেন মান বজায় রেখে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের ওয়েবসাইটে যে অ্যাপস আছে, তাতে ক্লিক করলে বিচারপ্রার্থীরা বাড়িতে বসেই মামলার রায় জানতে পারবেন। আর যেসব রায় ইংরেজিতে হয়, সেগুলো গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে এক ক্লিকে ইংরেজি থেকে বাংলা হয়ে যাচ্ছে। বিচারকরা কি রায় লিখলেন, এটা সবাই এখন বুঝতে পারবেন।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ২০২২ সালে মামলার নিষ্পত্তি ৩০ ভাগ বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ৫-৭ বছরে মামলার জট সহনশীল পর্যায়ে আসবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জাকারিয়া মোল্লার সভাপতিত্বে ও সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমানের শেখের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানী, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ কাজী আব্দুল হান্নান, জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আলম, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আর্শেদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান, জেলা জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. সাইফুর রহমান, প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব মো. আরিফুর ইসলাম, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া রহমান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফয়জুন্নেছা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শীলু রায়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন মোহাম্মদ আমানউল্লাহ প্রমুখ।