মুন্সিগঞ্জ, ১০ এপ্রিল ২০২৩, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়া দেখতে যেমন আশ্চর্য সাইজের খেতেও ভারি মিষ্টি। প্রতিবছর ৮-১০ হাজার মেট্রিক টন কুমড়া উৎপাদন হয় আড়িয়াল বিলে। বিক্রি হয় ঢাকার পাইকারি বাজারগুলোতে। বিলের পাশে গাদিঘাটেও সরাসরি চাষীরা বিক্রি করেন এই কুমড়া।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ আড়িয়াল বিলের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার গাদিঘাট, আলমপুর, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালি সহ বিলের বিভিন্ন অংশে চলতি বছর ২২২ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কুমড়া উৎপাদন হয়েছে।
স্থানীয় কুমড়া চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর শীতের শুরুতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে আড়িয়াল বিলের উন্নত পলিমাটির বিস্তীর্ণ উচু ভূমিতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপণ করে থাকেন কৃষক। ফেব্রুয়ারি-মার্চে যা বিল থেকে তুলে বিক্রি করেন বাজারে।
ভিডিও প্রতিবেদন:
আড়িয়াল বিলের একেকটি বড় সাইজের কুমড়ার ওজন ১০ কেজি থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে আড়িয়াল বিলের বিস্তীর্ণ উর্বর উচু ভূমিতে কুমড়া চাষের পর তা বিক্রি করে চাষীরা জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানকার কুমড়ার সাইজ দেখে মনে হতে পারে এই কুমড়া চাষে নানা উদ্ভাবনী পন্থা বোধহয় রয়েছে কৃষকের। আসলে তা নয়- দেখতে রিষ্ট-পুষ্ট হলেও আড়িয়াল বিলের মাটি ভূ-প্রকৃতিগতভাবে উর্বর হওয়াতে কুমড়া চাষে কৃষকের বিনিয়োগ সাধারণ কুমড়া চাষীদের চেয়েও কম করতে হয়।
একাধিক চাষি ও পাইকাররা জানান, গতবছরের চেয়ে এবছর কুমড়ার আকার ও উৎপাদন কম হলেও পূর্বের তুলনায় বাজারে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
তারা জানান, আড়িয়াল বিল থেকে কুমড়া উত্তোলনের পর পাইকারদের কাছে ১৮-২২ টাকা কেজি দরে কুমড়া বিক্রি করেন স্থানীয় চাষিরা। পাইকাররা সেগুলো পরিবহন করে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি হাটে ২৫-২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। এরপর খুচরা পর্যায়ে এই কুমড়া বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকা কেজিতে।
কুমড়া চাষী মো. বিল্লাল জানান, গতবারের তুলনায় এবার বাজারে কুমড়ার দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এতে আমরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছি। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব ও বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি বছর কুমড়ার আকার ও উৎপাদন কম হয়েছে।
কৃষক আমির হামজা বলেন, বিল থেকে কুমড়া উত্তোলন প্রায় শেষ। বাজারে এবার কুমড়ার দাম ভালো। বিলের সকল কুমড়া চাষীই এতে মহাখুশি।
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা শান্তণা রানি জানান, এ বছর আড়িয়াল বিলের ২২২ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। গতবছরের তুলনায় বেশি জমিতে কুমড়া চাষ হলেও উৎপাদন সেই তুলনায় বাড়েনি। এর জন্য ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব দায়ী বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে কুমড়া গাছে অজানা ভাইরাসের আক্রমণের খবর পাই আমরা। পরে কৃষি বিভাগ সেটিকে ‘মোজাইক ভাইরাস’ হিসেবে চিহ্নিত করে রোধের ব্যবস্থা করে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বীজ পাঠিয়ে আড়িয়াল বিলের অনুরুপ আকৃতির কুমড়া উৎপাদন করার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। আড়িয়াল বিলে ৬-৭ মাস পানি থাকে। তখন পানির নিচে নানা প্রজাতীর জলজ উদ্ভিদ জন্ম নেয়। যখন পানি শুকিয়ে যায় তখন এই উদ্ভিদগুলো পচেঁ মাটির সাথে মিশে উৎকৃষ্টমানের জৈব সারে রুপান্তরিত হয়। আমরা মনে করি- মিষ্টি কুমড়ার এত বড় সাইজের রহস্যের পেছনে আড়িয়াল বিলের মাটির গুনাগুনের মূখ্য ভূমিকা রয়েছে।
প্রাকৃতিক জলজ ভূমির আধার আড়িয়াল বিলের মাটির কারনে এখানে আলাদাভাবে জৈব সার ব্যবহার করতে হয় না। ফলে এখানের মাটি সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ বা এঁটেল দোঁআশ মাটি হওয়ায় প্রতিবছর ধাণ, কুমড়া, উস্তেসহ নানারকম সবজির উৎপাদন হয়ে থাকে।
বছরের ৬ মাস বিলটি থাকে পানির নিচে আর বাকি ৬ মাস থাকে শুস্ক ফসলি জমি।