মুন্সিগঞ্জ, ২৩ মার্চ, ২০২২, সদর প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)
আজ ২৩ মার্চ, মুন্সিগঞ্জের জনপ্রিয় রাজনীতিক ও ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের শক্ত হাতিয়ার এস এম মাহতাব উদ্দিন কল্লোলের জন্মদিন।
মাহতাব উদ্দিন কল্লোল, ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ মুন্সিগঞ্জ শহরের শ্রীপল্লি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এফ এস শামসুল হক, মা চেমন আরা বেগম।
১৯৭৯ সালে মুন্সিগঞ্জ হাইস্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে এইচ এস সি পাস করেন তিনি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
জনাব মোহাম্মদ আতাহার এর জৈষ্ঠ কন্যা বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য, ও মুন্সিগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক পেশায় শিক্ষিকা মোরশেদা বেগম লিপির সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। সংসার জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তান এবং এক পুত্র সন্তানের জনক।
১৯৭৮ সালে দশম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থান তৈরি করেন মাহতাব উদ্দিন কল্লোল। ১৯৮০ সালে প্রথম রাজনৈতিক মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। এই মামলার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৯৮১ সালে আবারও মামলা হয়। ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৮৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় কারাবরণ অবস্থায় তার মায়ের মৃত্যু হয়। সে সময় ৩ ঘন্টার জন্য প্যারোলে হাতকড়া পড়া অবস্থায় মায়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নেন তিনি।
১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় দফায় তাকে মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। নিষ্ঠা ও বিশ্বাসের সাথে তিনি সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
রাজনৈতিক অবস্থান ও সক্রিয় ভূমিকার কারনে বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ নির্দেশে তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ২৯৮ টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯১ সালে মুন্সিগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান সভাপতি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এর অর্পিত দায়িত্ব হিসেবে ১৯৯৬-২০০২ সাল পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১-২০০৬ পর্যন্ত তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের রোষানলে পরে একাধিকবার জেল খাটেন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা তার মুন্সিগঞ্জ শহরস্থ বাসভবন ও দোকানে হামলা করে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ও সম্পদ লুট করে। এসময় তার পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলা হয়। তাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিতে বিএনপি-জামায়াতের মদদে সিটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াতের অমানবিক নির্যাতন ও পৈশাচিকতার শিকার মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মীদের তার বাসায় আশ্রয় দিয়ে দীর্ঘদিন তাদের সকল ধরনের থাকা-খাওয়া সহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেন।
২০০৩ সালে তাকে মুন্সিগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াতের প্রবল আক্রমণের মুখে আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালে প্রয়াত বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা খালেকুজ্জামান খোকার নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৭ সালে ১/১১ সরকারের আমলে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা রুখে দিয়ে মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে মুন্সিগঞ্জ-ঢাকা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ করে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেসময় তার নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনের ফলে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল
হয়ে পড়ে।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সকল রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা রুখে দিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। এবং উভয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মুন্সিগঞ্জের ৩ টি আসনের প্রার্থীদের সাথে সমন্বয় করে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করেন। ২০০৮ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনিছুজ্জামান আনিছ এর নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০২০ সালে সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাবে নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়ে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ খ্যাতি পান তিনি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুরো মুন্সিগঞ্জ জেলাজুড়ে মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ করে লাগাতার খাদ্য সহায়তা বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করে ব্যাপক প্রশংসিত হন।
সাধারণ মানুষের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পৌছে দিতে তিনি ‘হ্যালো কল্লোল ভাই’ নামে মোবাইল সেবা চালু করেন। যেখানে মুন্সিগঞ্জের যে কোন নাগরিক তার পরিচয় গোপন রেখে সহায়তা চাইলে তার বাসায় নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য পৌছে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া করোনার সময় যখন মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায় তখন রমজানে ইফতার সামগ্রী, ঈদে শিশুদের মাঝে নতুন জামা ও দুস্থ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পোলার চাল, সেমাই, চিনি, মুরগীর মাংস ‘ঈদ উপহার’ হিসেবে পাঠান তিনি। এছাড়া মুন্সিগঞ্জবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মুন্সিগঞ্জে করোনা টেষ্ট ল্যাব বসানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন তিনি।
করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াতে গিয়ে সেসময় করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। পরবর্তীতে তিনি চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আবারও মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।