১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সোমবার | সকাল ১০:৪৭
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
অন্যের জমি দখল করে বিক্রি করাই রফিকুলের নেশা
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৭ অক্টোবর, ২০২২, নিজস্ব প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের ভাগ্যকূল ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম। যার নেশা অন্যের জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় একটি পক্ষের অভিযোগ, প্রথমে অন্যের জমির ভূয়া দলিল বানান তিনি এরপর সেই জমি দখলে নামেন।

উত্তর কামারগাঁও এলাকার ফরেস মোড়ল অভিযোগ করে জানান, সম্প্রতি কামারগাঁও গ্রামের আল আমিন বাজারের  ১৮ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। পরে একই এলাকার মো. হাবিবুর রহমান মাসুদের কাছে সেই জমি বিক্রি করে ‍দিয়েছেন তিনি।

জমিটির প্রকৃত মালিক ফরেস মোড়ল। এ ঘটনায় উভয় পক্ষই শ্রীনগর থানায় কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে থানা পুলিশ উভয় পক্ষকে নিয়ে মিমাংসায় বসলেও তারা কোন মীমাংসায় যায়নি।

ফরেস মোড়ল বলেন, উত্তর কামারগাও মৌজার ৭৮৬০ খতিয়ানের ১৫১ ও ১৫৩ দাগের এ দু’টি ২৩ শতাংশ জমির মালিক আমি। যার খাজনা পরিশোধ ও নামজারি সহ আমাদের কাছে ৪টা ভায়া দলিল রয়েছে। আমার মালিকানা থাকা সত্বেও রফিকুল ইসলাম জমিটি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। যেটির দাগ নং ১৫৩। আমাদের কাছে সকল বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ১৫৩ দাগে জমিটি এলাকার মৃত ইদ্রিস মুন্সীর ছেলে সৌদি প্রবাসী মো. হাবিবুর রহমান মাসুদ রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে কিনেছেন বলে জোরপূর্বক দখলে নিয়ে হাজী মালেক ফকির প্লাজা নামে একটি মার্কেট নির্মাণ করার প্রস্তুতি নেয়। এতে আমি বাধা দেই। আমি যে জমি দুইটি কিনেছি মূল মালিকের ওয়ারিশদের কাছ থেকে কিনেছি। এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।

ব্যবসায়ী ফরেস মোড়ল আরও জানান, ‘ক’ তফসিল বর্ণিত সম্পত্তির মূল মালিক ছিলেন লস্কর গায়েন। এর নালিশী সম্পত্তিতে মালিক ও ভোগদখলকার বিদ্যমান থাকাবস্থায় তিনি তার ৬ পুত্র ও স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করেন।

আব্দুল গায়েন, হিরণদি গায়েন, সাবু গায়োন, ইয়াকুব গায়েন, সিকিমালী গায়েন, আকুবআলী গায়েন, ও স্ত্রী আয়তন নেছা ওয়ারিশ রেখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরা সকলেই নালিশী সম্পত্তির ওয়ারিশসূত্রে মালিক ও ভোগদখলকার বিদ্যমান থাকা অবস্থায় বিগত সিএস জরিপ চলাকালে সিএস ২১১৪ নং খতিয়ানের এদের ৬ ছেলেকে সমানভাবে ভাগ করে জরিপে চূড়ান্ত লিপিবদ্ধ হয়।

ভূলক্রমে সিএস খতিয়ানে আয়তন নেছার নাম লিপিবদ্ধ না হলেও তার মালিকানা ও ভোগদখলে কোন ব্যাত্যয় ঘটেনি। এছাড়া সিএস রেকর্ডীয় মালিক সাবু গায়েন অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাই সাবু গায়েনের ওয়ারিশসূত্রে পাওনা সম্পত্তি সকল ভাই ও মায়ের কাছে চলে যায়।

এরপর আব্দুল গায়েন, এয়াকুব গায়েন, সিকিমালী গায়েন, আয়তন নেছা বিবি ও করিমন নেছা ১৯১২ সালের ৯ জুলাই ৩১১০ নং রেজিষ্টিকৃত সাফকবলায় দলিল মূলে তৈজদ্দিন ও মেহের আলীর কাছে বিক্রি করে দেন। তৈজদ্দিন ও মেহের আলী ৭.৮.১৯১২ ৩১১০ রেজিষ্টিকৃত সাফকবলা দলিল অনুযায়ী ভোগদখল করতে থাকে। এমতাবস্থায় তৈজদ্দিনের ছেলে ছোট খোকা, মেয়ে সাহেতন নেছা ও স্ত্রী সবুরন নেছাকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেন। বাবা তৈজদ্দিনের মৃত্যুর পর ছেলে ছোট খোকা নাবালক অবস্থায় বোন ও মাকে রেখে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ছবুরন নেছা একমাত্র কন্যা সন্তান সাহেতন নেছা বিবিকে রেখে তিনিও মারা যান। সাহেতন নেছা বিবি নালিশী সম্পত্তির মালিক হইয়া ভোগদখল থাকা অবস্থায় ১৪/১২/ ১৯২৫ইং ৫৩১৩ নং সাফকবলা দলিলে গোপাল ফকির ও আনদেশা বিবির কাছে বিক্রি করে দেন।

পরবর্তীতে গোপাল ফকির মৃত্যুবরণ করলে তাদের ওয়ারিশদের কাছ থেকে বিগত ৭.৬.২০২২ইং তারিখে ৫৫১৫নং রেজিষ্টিকৃত বিল এওয়াজ হেবানামা দলিলমূল্যে ফরেশ মোড়ল অর্থাৎ আমার কাছে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে আমি ফরেশ মোড়ল জমিটি ভোগদখল করে আসছি। আমি বিগত ২১.৭.২২ তারিখে ১০৮৬৯-২১-২২ নং নামজারি কেসমূল্যে নিজ নামে নামজারি করিয়া খাজনা আদায়ে দাখিলপ্রাপ্ত হই। যাহার সিএস খতিয়ান ২১৪৪, এসএ ২১০৯, আরএস ৮৭৯, সিএস ও এসএ দাগ ১৩৮ আরএস ১৫৩ দাগের নাল জমির পরিমাণ ৮০ শতাংশ। ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কামারগাও মৌজা অবস্থিত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নুরুল আমিন মোড়ল বলেন, অনেক বছর ধরেই রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন মানুষের জমি দখল করিয়ে দেওয়ার টেন্ডার নিয়ে থাকেন। সম্প্রতি আমাদের জমিও তিনি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। তাকে বাধা দেওয়ার কারও শক্তি নেই। তার বিরুদ্ধে শতশত অভিযোগ রয়েছে এলাকায়। কেউ ভয়ে মুখ খুলে না। আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আকুল আবেদন করছি তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য।

অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি এ সম্পত্তি কিনেছি ২০১৬ সালে। তখন থেকে আমি ভোগ দখলে আছি। পরে আমি মো. হাবিবুর রহমান মাসুদের কাছে তা বিক্রি করে দেই। তাদের কাগজপত্রে অনেক ভুল রয়েছে। তিনি বলেন, কাগজ যার সম্পত্তি তার। ইউপি সদস্য মো. নুরুল আমিন মোড়ল তিনি ভুয়া দলিল তৈরী করে জমিটি দখলে নিতে যায়। এতে তিনি ব্যর্থ হন।

শ্রীনগর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, জমিজমার বিষয় বিজ্ঞ আদালত নিষ্পত্তি করবে। তাই বিরোধপূর্ণ ঐ জমিটির বিষয়ে উভয় পক্ষকেই বিজ্ঞ আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মালিকানা নির্ধারণ হবে। তবে এ বিষয়ে কোন বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকবে।

error: দুঃখিত!