মুন্সিগঞ্জ, ১৫ মে ২০২৪, শিহাব আহমেদ (আমার বিক্রমপুর)
অটো রিকশা চালিয়ে এসএসসি পাশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মুন্সিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ হাসান। সামনে কলেজে আরও ভালো ফলাফল করার পরিকল্পনা তার। আব্দুল্লাহ মনে করে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। কাজ করেও যে লেখাপড়া চালানো সম্ভব তারই প্রমাণ দিয়েছে সে।
ভবিষ্যতে বিদেশে পাড়ি না জমিয়ে দেশের জন্য কিছু করার অদম্য আগ্রহ। আব্দুল্লাহ মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে।
মুন্সিগঞ্জ শহরের অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছুটে বেড়ায় দিন-রাত।
মঙ্গলবার দুপুরে দেখা হয় তার সঙ্গে। আলাপ প্রসঙ্গে সে জানায়, ‘অনেক মেধাবী বিদেশে গিয়ে আর ফেরেন না। এটি আমার অপছন্দ। আমি দেশেই থাকতে চাই। দেশ মেধাশূণ্য হয়ে যাক এটা আমার অপছন্দ।’ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘মা ও মাটির জন্য কিছু করতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে চাই- বর্তমান প্রজন্মের যারা নেতিবাচক কাজে জড়িত, পড়ালেখায় অমনোযোগী তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করতে চাই।’
আব্দুল্লাহ সংসারের চরম দারিদ্রতা দেখে শিশু অবস্থায়ই নিজে পড়েছেন আবার বাসায় বাসায় পাঠদানও করিয়েছেন। তবে এভাবে তার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিলো। পরে ভাড়ায় মিশুক চালাতে শুরু করে সে। পাশাপাশি অবসরের সময়গুলোতে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনাও।
আব্দুল্লাহ জানান, ‘মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে মা ও নানা-নানীসহ পাঁচ জনের সংসারের হাল ধরেছি। এই মিশুক চালিয়েই কলেজে ভর্তি হওয়ার টাকা জোগাড় করবো। তবে মিশুক চালিয়ে যা আয় তা থেকে প্রতিদিন ৪৫০ টাকা দিয়ে দিতে হয় ভাড়া বাবদ। বাকিটা আমার আয়। এই আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়৷ নিজের একটি মিশুক থাকলে প্রতিদিন এই টাকাটা বেঁচে যেত।’
আব্দুল্লাহ প্রসঙ্গে মুন্সিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তনুজা আহম্মেদ বলেন, ‘নবম শ্রেণি থেকে আব্দুল্লাহ মিশুক চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন সে স্কুলেও ঠিকঠাক এসেছে। একটা ছেলে মায়ের কতটা বাধ্যগত হলে এরকম হতে পারে তা বোঝাই যায়। ছেলেটি এই সমাজের দৃষ্টান্ত।’
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় ওর বাবা ওর মাকে ফেলে চলে যায়। ওর মা এখন ব্রেইন রোগে আক্রান্ত। এত চ্যালেঞ্জের পরও আব্দুল্লাহ ‘এ’ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই তার পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষক ও সহপাঠীরাও খুশি।’