২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শুক্রবার | রাত ২:০০
Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মুন্সিগঞ্জের গণহত্যা নিয়ে সাহাদাত পারভেজের বই
খবরটি শেয়ার করুন:

মুন্সিগঞ্জ, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, বিশেষ প্রতিনিধি (আমার বিক্রমপুর)

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এ প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও শেকড়সন্ধানী লেখক সাহাদাত পারভেজের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘গণহত্যা বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ : মুন্সিগঞ্জ জেলা’। 

বইটি প্রকাশ করেছে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার সুবর্ণ প্রকাশনীর ১৫৭-১৬০ নম্বর স্টলে। ১৬৪ পৃষ্ঠার বইটির দাম ২০০ টাকা। মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকায়। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ২৪টি জেলার জরিপ গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। মুন্সিগঞ্জের জরিপটি তাদের ২৩তম গ্রন্থ।

প্রচলিত ধারণা মতে, মুন্সিগঞ্জ জেলায় ১৩টি গণহত্যার কথা জানা যায়। কিন্তু সাহাদাত পারভেজ দুই বছর ধরে ৩৬৭ বর্গমাইল আয়তনের মুন্সিগঞ্জের প্রায় প্রতিটি গ্রাম ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন।

তার অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে অনেক নতুন তথ্য। এই গবেষণার মাধ্যমে ১৪৫টি গণহত্যা, ৬৫টি গণকবর, ৭টি বধ্যভূমি, ১৭টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ মোট ২৩৪টি গণহত্যার নিদর্শন তুলে ধরা হয়। শহীদের তালিকার পাশাপাশি দালাল, রাজাকার ও শান্তিকমিটির সদস্যদের তালিকাও তুলে ধরা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের গণহত্যার বেশির ভাগই পূর্বপরিকল্পিত। এখানে মে মাসের শুরুতে ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের সৈন্যদের পাঠানো হয় মূলত গণহত্যা পরিচালনার জন্য।

মুসলমানদের পাশাপাশি দূরদূরান্তের হিন্দুরা যে বাড়িতে আশ্রয় নেয়; সেগুলো টার্গেট করে গণহত্যা চালানো হয়। নির্মমতার দিক থেকেও এখানকার গণহত্যাগুলোর একটা আলাদা বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয়। কাতারে কাতারে মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে এখানে শুধু মানবতাই লংঘন করা হয়নি; হত্যাযজ্ঞের পর হানাদার বাহিনী রাজাকার পাহারা বসিয়ে ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে। তাই সৎকার তো দূরের কথা, কেউ লাশের কাছেও আসতে সাহস পাননি। ফলে কারো পক্ষে লাশ শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি। এই গবেষণার মাধ্যমে সময়ের অতলে চাপা পড়া এমন অনেক অজানা লোমহর্ষক ঘটনার তথ্য উঠে এসেছে। তার লেখায় ফুটে ওঠে ৯ মাসের হত্যা ও নির্যাতনের অনুপঙ্খ কাহিনী। বইটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অবিনাশী দলিল।

এই বই সম্পর্কে লেখক সাহাদাত পারভেজ জানান, মুন্সিগঞ্জে আমার জন্ম। এর আলো-বাতাসে আমি বড় হয়েছি। মানুষের জন্মের একটা দায় থাকে। আমি এই দায়বদ্ধতা থেকে এ বিষয়ে লিখতে প্রাণিত হয়েছি। বিপন্ন মানুষের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ তুলে আনা সহজ ব্যাপার নয়। গণহত্যা, খুন, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, বলাৎকার, ধর্ষণ, ধর্ষণ-পরবর্তী দেশান্তরসহ সব ঘটনাপ্রবাহের নানা বিশ্লেষণ তুলে আনার কাজটা কঠিন। তবে একটি কথা জোর দিয়ে বলতে পারি, ঘটনাস্থলে না গিয়ে কিংবা নিশ্চিত না হয়ে একটি লাইনও লিখিনি। প্রাণপণ চেষ্টা করেছি মুন্সিগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ তথা গণহত্যার একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে।

সাহাদাত পারভেজ বর্তমানে দৈনিক দেশ রূপান্তরের ফটো এডিটর ও স্টেট ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ এর জার্নালিজম, কমিউনিকেশন ও মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগের খ-কালীন শিকক।

তিনি ১৯৭৭ সালের ৮ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ‘গণহত্যা বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ : মুন্সিগঞ্জ জেলা’ লেখকের অষ্টম গ্রন্থ।

এর আগে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ গজারিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, গণহত্যা গজারিয়া : রক্ত, মৃত্যু মুক্তি, শেকড়ের খোঁজে, একটি বিদ্যালয় বৃত্তান্ত, শতবর্ষের পথিক (ফটো অ্যালবাম), যে ছবি হৃদয়ে আঁকা (কবিতা) ও চঞ্চল মাহমুদ : ক্যামেরার জাদুকর (সম্পাদনা) প্রকাশিত হয়।

error: দুঃখিত!